নতুন রঙের হদিশ

নতুন রঙের হদিশ

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ মার্চ, ২০২৫

দক্ষিণ কোরিয়ার পোহাং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দুই বছরের কঠোর পরিশ্রমে একটি বিশেষ ফ্লুরোসেন্ট রং তৈরি করেছেন। তাদের এই নিষ্ঠার সাথে মারি কুরির অক্লান্ত অধ্যবসায়ের তুলনা করা যায়। তিনি বছরের প্র বছর টন টন আকরিক থেকে মাত্র ১ গ্রাম রেডিয়াম নিষ্কাশন করেছিলেন, যা তাকে নোবেল পুরস্কারের সাফল্য এনে দিয়েছিল । মূলত, যে রং প্রচলিত রঙের তুলনায় বেশি আলো শোষণ করে এবং প্রতিফলিত করে তাকে ফ্লুরোসেন্ট রঙ বলে। এই রঙগুলি সাধারণ রঙের চেয়ে উজ্জ্বল এবং গাঢ়। ফ্লুরোসেন্ট রঙকে নিয়ন রঙও বলা হয়। এক-অণু ইমেজিং একটি শক্তিশালী প্রযুক্তি যা বিশেষ উজ্জ্বল চিহ্ন ব্যবহার করে কোষের ভিতরে প্রোটিনগুলোর গতিবিধি অনুসরণ করতে সাহায্য করে বিজ্ঞানীদের । এই পদ্ধতিটি কোষবিজ্ঞান, জীবরসায়ন এবং নতুন ওষুধ আবিষ্কারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু
সমস্যা হল, পরিবর্তিত প্রচলিত উজ্জ্বল চিহ্নটি, যার নাম জৈব ফ্লোরোফোর, তা বেশি সময় টিকে থাকতে পারে না। আলোতে দ্রুত ফিকে হয়ে যায়।
ফটোব্লিচিং হল একটি প্রক্রিয়া যেখানে ফ্লুরোসেন্ট অণুগুলি দীর্ঘ সময় আলোতে থাকার কারণে তাদের উজ্জ্বলতা হারিয়ে কোষের ভেতরে প্রোটিনের গতিবিধি অনুসরণ কঠিন করে তোলে।পোসটেকএর অধ্যাপক সুং হো রিউ-এর গবেষণা দল আকস্মিকভাবে একটি বিশেষ ফ্লুরোসেন্ট অণু আবিষ্কার করেন, যা দীর্ঘ সময় উজ্জ্বল থাকে। এটি ফটোব্লুয়িং নামে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা হয় । এই প্রক্রিয়ায় অণুটি বিবর্ণ হওয়ার পরিবর্তে আরও স্থিতিশীল হয়ে ওঠে।

প্রফেসর ইয়ং-তায়ে চ্যাং-ও অন্যান্য গবেষকদের সহযোগিতায় ম্যাস স্পেকট্রোমেট্রি এবং নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ব্যবহার করে ফিনিক্স ফ্লুওর ৫৫৫ (পিএফ ৫৫৫) নামের একটি নতুন ফ্লুরোসেন্ট ডাই-এর গঠন শনাক্ত করেছেন।
পিএফ৫৫৫ অন্যান্য ফ্লুরোসেন্ট ডাই-এর তুলনায় অনেক বেশি স্থিতিশীল, যা একক-অণু স্তরে পৃথক প্রোটিন এবং বৃহৎ পরিসরে একাধিক প্রোটিন অনুসরণ করার জন্য উপযোগী। এটি অক্সিজেনের মাত্রা দ্বারা প্রভাবিত হয় না এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিবর্ণ হয় না।
পিএফ৫৫৫ ব্যবহার করে, গবেষকরা এন্ডোসাইটোসিস এবং প্রোটিন পারস্পরিক ক্রিয়ার মতো জৈবিক প্রক্রিয়াগুলি পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছেন যা আগে করা কঠিন ছিল।
বিজ্ঞানীরা ‘এপিডার্মাল গ্রোথ ফ্যাক্টর রিসেপটর ‘ আবিষ্কার করেছেন, যা কোষের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এটি দুটি ভিন্ন অবস্থায় থাকতে পারে। এক অবস্থায়, এটি কোষের ঝিল্লির উপর ক্লাথ্রিন-কোটেড স্ট্রাকচার নামক বিশেষ কাঠামোর মধ্যে আটকে থাকে। অন্য অবস্থায়, এটি তার আশেপাশে স্বাধীনভাবে চলাচল করে।

এ থেকে বোঝা যায়, ইজিএফআর শুধু স্থির থাকে না, বরং চারপাশের পরিবেশ বুঝতে চেষ্টা করে। এটি বাইরের সংকেত খুঁজতে পারে বা অন্যান্য আণবিক মিথস্ক্রিয়া করে যাতে কোষ সঠিকভাবে কাজ করতে পারে।পিএফ ৫৫৫ রঙ অনেক বেশি স্থিতিশীল হওয়ায় বিজ্ঞানীরা ইজিএফআর কীভাবে কোষের ভেতরে যায় ও ফিরে আসে, তা স্পষ্টভাবে দেখতে পেরেছেন।
অধ্যাপক ইয়ং -তাই চ্যাং জানান, এটি ওষুধ গবেষণা, রোগ নির্ণয় এবং কোষ পর্যবেক্ষণে কাজে লাগবে।
অধ্যাপক সুং হো রিউ, অধ্যাপক ইয়ং-তায়ে চ্যাং ও ড. সান হাইওক লি এর সহযোগিতায়
পোস্টটেক-এ এই গবেষণাটি করেছেন।
তাদের কাজ ‘নেচার মেথডস্’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এই কাজে সহায়তা করেছে কোরিয়ার ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 4 =