নতুন শক্তিশালী ভ্যাকসিন এর বলে

নতুন শক্তিশালী ভ্যাকসিন এর বলে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ আগষ্ট, ২০২১

করোনা ভাইরাসের আকার আর চেহারা বদলায় গিরগিটির থেকেও তাড়াতাড়ি। কোন খেয়ালের বশে ভাইরাস এটা করে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে এটা এখন প্রতিষ্ঠিত যে ‘মিউটেশন’ নামের শরীরের গঠনের ‘ইঁট পাথর’ বদলেই ভাইরাস নতুন নতুন এবং ভাইরাসের জন্য প্রতিকূল পরিবেশে আত্মরক্ষা করছে। দানবের আত্মরক্ষার সাফল্য মানেই মানুষের বিপদ। হচ্ছেও তাই। ভ্যাকসিনকে অগ্নিবাণের মতো ব্যবহার করে করোনা মুক্তির যে চেষ্টা সারা পৃথিবীতে চলছে, তাতেও বাধা ওই মিউটেশন। পিছলে যাচ্ছে করোনা, ভ্যাকসিনের জাল থেকে। ভাসিয়ে রাখছে নিজেকে গঠন বদলিয়ে। ভ্যাকসিনের তৈরি করা প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি নতুন রূপে আবির্ভূত ভাইরাসকে পারছেনা চিনতে কিংবা নিষ্ক্রিয় করতে। পারছেনা বলাটা ঠিক নয়, যতটা পারলে আমরা স্বস্তি পাই ততটা নয়। মানুষ আর তার বিজ্ঞানও পিছিয়ে নেই। আর তার অস্ত্র বিজ্ঞানও পিছিয়ে নেই। চেষ্টা চলছে ভাইরাসের শরীরের এমন একটা অংশ খুঁজে বের করার যা সে বদলাতে পারে না বা বদলালেও কম বদলায়। করোনার মানুষকে বিদ্ধ করার সময় হুল ফোটানোর কাজ করে তার শরীরের বাইরে থাকা একটি প্রোটিন- তার নাম ‘স্পাইক’ প্রোটিন। সজারুর কাঁটার মত বেড়িয়ে থাকা এই প্রোটিনই যত নষ্টের রূপকার। তার আবার দুটি হাত- একটির পোশাকি নাম এস-১, অন্যটির এস-২। এই দুটির মধ্যে প্রথমটি (এস-১) চঞ্চল প্রকৃতির আর পাল্টায় বেশী। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে এস-২ প্রোটিন অনেক বেশী ধিরস্থির- প্রায় পাল্টায়ই না। এতএব করোনাকে বাগে আনতে এমন অ্যান্টিবডি দরকার যা তার অবিকৃত (এস-২) শরীরের অংশে আঘাত করে। তাতে সে যতই বদলাক- আহত হবে। এস-২ প্রোটিনের কোমরের কাছে একটি অঞ্চল বিজ্ঞানীরা খুঁজে বের করেছেন যা এই কাজের লক্ষ্যবস্তু হিসাবে ব্যবহার করা যায়। অতএব নেমে পড়া।
‘সায়েন্স’ পত্রিকায় প্রকাশিতব্য নিবন্ধে পৃথিবীর তিনটি মহাদেশের একান্ন জন বিজ্ঞানী মিলে আবিষ্কার করেছেন যে এস-২ প্রোটিনের কোমরের অংশের বিরুদ্ধে তৈরি মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি বিটা করোনা ভাইরাস গোত্রের ভাইরাসকেই শুধু নয়- কাছাকাছি গোত্রের আরও অনেক ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে। আর এই নিপুন দক্ষতার ফল হয় ফুসফুসে ভাইরাসের পরিমাণ যায় কমে। বিজ্ঞানীরা নানা পদ্ধতির প্রয়োগে এই অ্যান্টিবডির গঠন বার করেছেন, তা হ্যামস্টারের উপর প্রয়োগ করে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধী হিসাবে ফলও পেয়েছেন। কেন এই আবিষ্কারকে ঘিরে স্বপ্ন? ডুরা পিণ্টো এবং অন্যান্যদের গবেষণার ফলে আবিষ্কৃত এই মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী ভ্যাকসিনে ব্যবহার যোগ্য হয়ে উঠতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − thirteen =