নবরূপে এপিজেনেটিক্‌স?

নবরূপে এপিজেনেটিক্‌স?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

এপিজেনেটিক্‌স হল ডি এন এ-র নিজস্ব পর্যায়ক্রমে কোনো পরিবর্তন না ঘটিয়ে ডি এন এ-তে অদলবদল আনার এক প্রক্রিয়া। সুনির্দিষ্ট জিনের সঙ্গে রাসায়নিক গোষ্ঠী জুড়ে গেলে কীভাবে জিনের ক্রিয়া চালু কিংবা বন্ধ হয়, অথবা কীভাবে ক্রোমোসোমের ত্রিমাত্রিক গড়ন বদলে যায়, তা এই প্রক্রিয়া থেকে বোঝা যায়। তাবৎকালের ধারণা, ডি এন এ এবং আর এন এ –র পরিবর্তনগুলি হয় একে অপরের থেকে স্বতন্ত্রভাবে। কিন্তু ‘সেল’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে একদল বিজ্ঞানী দেখিয়েছেন, জিনের বাহ্যিক ক্রিয়া (জিন এক্সপ্রেশন) নিয়ন্ত্রণ করতে আর এন এ এবং ডি এন এ উভয়েই ‘জিন মেথিলেশন’ নামক এক জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ার আশ্রয় নেয়। জিন মেথিলেশন প্রক্রিয়ায় ডি এন এ-র সঙ্গে মিথাইল নামক রাসায়নিক গোষ্ঠী জুড়ে যায়, যার ফলে জিনের সক্রিয়তায় পরিবর্তন আসে। এই পরিবর্তনকে বলে এপিজেনেটিক অদলবদল। ডি এন এ-র মূল পর্যায়ক্রমে এতে কোনো পরিবর্তন ঘটে না, কিন্তু অদলবদলগুলি বংশানুক্রমিক। গবেষণা থেকে দেখা গেছে, আর এন এ-তে পরিবর্তন আনার জন্য পরিচিত METTL3-METTL14 নামক প্রোটিন গোষ্ঠীটি মিথষ্ক্রিয়া করে DNMT1 নামক অন্য একটি প্রোটিন গোষ্ঠীর সঙ্গে, যা মুখ্যত ডি এন এ পরিবর্তনের কাজ করে । এই যৌথ প্রক্রিয়ায় জিনের বাহ্যিক ক্রিয়াকর্ম আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে ওঠে, বিশেষ করে কোশ বিভাজনের সময় আদি স্টেম সেলটি যখন হৃৎপিণ্ড কিংবা ফুসফুস প্রভৃতি নির্দিষ্ট রূপ লাভ করে। মাউস-ভ্রূণের আদি স্টেম সেলগুলি বিকশিত হওয়ার সময় ডি এন এ এবং আর এন এ মেথিলেশনের অবস্থানের মানচিত্র এঁকেছেন বিজ্ঞানীরা। তা থেকে দেখা গেছে, হাজার হাজার জিন এবং তাদের পরিপূরক আর এন এ অণুতে উভয় মেথিলেশনেরই চিহ্ণ রয়েছে। এই সমন্বিত প্রক্রিয়া ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়লে ঠিকমতো প্রোটিন নিঃসরণ হবে না – হয় প্রয়োজনের থেকে বেশি প্রোটিন বেরোবে, নাহয় একবেবারেই কম। অতিমাত্রায় প্রোটিন নিঃসরণ হলে কোশের ক্ষতি হতে পারে, টিউমার তৈরি হতে পারে, যা ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য ডি এন নিরোধক ওষুধ বর্তমানে প্রচলিত। গবেষকরা তার সঙ্গে এবার আর এন এ মেথিলেশন নিরোধক ওষুধ যোগ করে প্রাথমিক পর্যায়ের একটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু করেছেন। ল্যাবরেটরিতে লিউকেমিয়ার চিকিৎসায় এরই মধ্যে কিছু আশাপ্রদ প্রাথমিক ফল পাওয়া গেছে। বেলজিয়ামের ইউ এল বি ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টারের অধ্যক্ষ ফ্রাঁসোয়া ফুক্‌স জানিয়েছেন, এখনো এ গবেষণার কিছু সীমবদ্ধতা আছে। তবু, এ গবেষণা থেকে জিনের নিয়ন্ত্রণ সম্বন্ধে নতুন কিছু তথ্য জানা গেছে, যা ক্যান্সারের চিকিৎসায় নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
সূত্র: LiveScience, 13.2.2025

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four + 6 =