নরম পানীয়, কৃত্রিম ফলের রস ও কফি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে

নরম পানীয়, কৃত্রিম ফলের রস ও কফি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২ অক্টোবর, ২০২৪

চারিদিকে এত হাহাকার সত্ত্বেও অসচেতনতার অন্ত নেই জনমানসে। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে অসংখ্য প্রাণ কেড়ে নেয় মারণ রোগ-স্ট্রোক। ২৫ বছর বেশি বয়সি মানুষের মধ্যে গড়ে প্রতি চার জনের এক জন আক্রান্ত হন স্ট্রোকে। ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটি, কানাডা এবং ইউনিভার্সিটি অফ গালওয়ের বিশেষজ্ঞদের গবেষণার ফলাফল অনুসারে, ফেনায় ভরা নরম পানীয় বা ফলের রস ঘন ঘন পান করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে প্রতিদিন চার কাপের বেশি কফি পান করলেও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। গবেষণাটি ইন্টারস্ট্রোক নামে এক রিসার্চ প্রকল্পের অন্তর্গত যা ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ স্ট্রোক-এ প্রকাশিত হয়েছে। ‘ইন্টারস্ট্রোক’ নামাঙ্কিত এই অধ্যয়ন সবচেয়ে বড়ো আন্তর্জাতিক মানের অধ্যয়ন, যাতে ২৭টি দেশের প্রায় ২৭,০০০ ব্যক্তি অন্তর্ভুক্ত, এবং এদের মধ্যে প্রায় ১৩,৫০০ জন ব্যক্তি প্রথম স্ট্রোকের সম্মুখীন হন।
স্ট্রোকে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, ফলে মস্তিষ্কের কোশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাধারণত মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে ইস্কেমিক স্ট্রোক হতে পারে, অথবা যখন মস্তিষ্কের কলাতে রক্তক্ষরণ হয় তখন ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ হয়ে থাকে।
গবেষকরা স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন। গবেষণায় জানা গেছে চিনি বা কৃত্রিম মিষ্টিযুক্ত পানীয় স্ট্রোকের সম্ভাবনা ২২% বৃদ্ধি করে। দিনে দুবার বা তার বেশি এই পানীয় খেলে স্ট্রোকের সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়। এই বৃদ্ধি পূর্ব/মধ্য ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে যে ফলের রসেও অতিরিক্ত শর্করা এবং সংরক্ষক থাকে, যা সাধারণত তাজা ফলের উপকারিতা হ্রাস করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। এই ধরনের পানীয়র ফলে রক্তপাতের কারণে স্ট্রোকের সম্ভাবনা ৩৭% বৃদ্ধি পায়। দিনে দুবার এই পানীয় পান করলে ঝুঁকি প্রায় তিনগুণ বেড়ে যায়। এই অসুস্থতা মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা গেছে। অধ্যয়নে কফিকেও অনুরূপ ক্ষতিকারক বলে জানানো হয়েছে। দিনে চার কাপের বেশি কফি পান করলে স্ট্রোকের সম্ভাবনা ৩৭% বেড়ে যায়, অন্যদিকে চায়ের ক্ষেত্রে স্ট্রোকের সম্ভাবনা ১৮-২০% কমে যায়। প্রতিদিন ৩-৪ কাপ দুধ ছাড়া চা পান করলে স্ট্রোকের সম্ভাবনা ২৯% কমে যায়। আবার প্রতিদিন ৩-৪ কাপ গ্রিন টি পান করলে স্ট্রোকের সম্ভাবনা ২৭% কমে। দুধ যুক্ত চা ক্ষতিকারক কারণ সেখানে চায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উপকারী প্রভাব কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায় ফলে স্ট্রোকের সম্ভাবনা রোধ করা যায় না। তবে গবেষণার ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক পার্থক্য ছিল — চিন ও দক্ষিণ আমেরিকায় চা পান স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমালেও দক্ষিণ এশিয়ায় স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেশি থাকে। গবেষকদের মতে ইন্টারস্ট্রোক অধ্যয়নটির মূল লক্ষ্য হল জনমানসে সচেতনতা গড়ে তুলে স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাস করা। যদিও উচ্চ রক্তচাপ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকির কারণ, তবে খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন, শারীরিক কার্যকলাপ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারার মাধ্যমে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমানো যেতে পারে।