নামিবিয়ার ঘাসজমিতে ন্যাড়া বৃত্তের রহস্য ঘুচল

নামিবিয়ার ঘাসজমিতে ন্যাড়া বৃত্তের রহস্য ঘুচল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ১১ এপ্রিল, ২০২৩

নামিবিয়ার সমুদ্র উপকূল থেকে প্রায় একশো কিলোমিটার ভেতরের ঘাসজমিতে অদ্ভুত দৃশ্য। লক্ষ লক্ষ বৃত্তাকার ন্যাড়া অংশ, যেখানে ঘাসের ছিটেফোঁটা নেই। কয়েক মিটার ব্যাসার্ধের এই আজব বৃত্ত নিয়ে গবেষকরা কিছুটা দ্বিধায় অবশ্যই ছিলেন। উঁচু থেকে দেখলে মনে হবে সুষম জ্যামিতিক কোনও নকশা যেন বিছিয়ে রয়েছে বিস্তীর্ণ প্রান্তরে।
প্রথমে বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন উইপোকার কারসাজিতেই বুঝি এসব। ঐ অঞ্চলে কলোনির আকারে বিপুল সংখ্যক উইপোকার বাস। জার্মানির গটিঞ্জেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ স্টেফান গেটজিন ও তাঁর সহকর্মীদের নিরলস গবেষণায় দেখা গেল, উইপোকার আক্রমণ নয়, বরং স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্রের নিয়মেই সৃষ্টি হয়েছে ঐ ন্যাড়া বৃত্তগুলো।
বৃত্তের মধ্যেকার মরা ঘাসের মূল ভালোভাবে পরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা। মাটির আর্দ্রতা মাপার জন্য লাগানো হয়েছিল বিশেষ ধরণের সেন্সর। শুখা মরসুমের সাথে সাথে বৃষ্টিপাতের সময়েও নানান হিসেব নেওয়া হয়েছে ঐ ঘামজমির অঞ্চল থেকে। দেখা গেছে, বৃষ্টি শেষ হওয়ার মোটামুটি দশদিন পর থেকেই বৃত্তের ভেতরকার ঘাস নষ্ট হতে শুরু করে। বৃত্তের মধ্যে নতুন ঘাসের বীজোদ্গমের কোনও চিহ্নও ছিল না। কিন্তু বৃত্তের চারপাশের ঘাসগুলো কিন্তু দিব্বি সতেজ আর সবুজ। গবেষকরা লক্ষ্য করেন মৃত ঘাসের মূল মাটির অনেকটাই গভীরে প্রবেশ করেছে কিন্তু জলের সন্ধান পায়নি। স্বভাবতই শুকিয়ে হলুদ হয়ে মারা গেছে বৃত্তের ভেতরকার ঘাস।
ডঃ গেটজিন বলছেন ঘাসজমির ভেতর বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণের জন্যে নিজে থেকেই ঐ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। যাতে নির্দিষ্ট কিছু অংশে ঘাস শুকিয়ে অন্যত্র স্বাভাবিক বৃদ্ধি হতে পারে তাদের। এটাকে প্রাকৃতিক ভেজিটেশান গ্যাপ বলে ব্যাখ্যা করেছেন উনি। ঘাসজমির বাস্তুতন্ত্রকে স্বয়ংক্রিয় উপায়ে রক্ষা করার ঐ একটাই উপায়।
গবেষণার আর্থিক অনুদান জুগিয়েছে জার্মান রিসার্চ ফাউন্ডেশান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven + 19 =