নিউট্রন স্টার বিষয়ে দুচারকথা

নিউট্রন স্টার বিষয়ে দুচারকথা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৯ মে, ২০২২

 

১৯৬৭ সালে জোসলিন বেল এবং অ্যান্টনি হিউয়িশ নামে দুই জ্যোতির্বিদ মহাকাশে সম্পূর্ণ নতুন এক ধরণের নক্ষত্র আবিষ্কার করলেন। মানুষের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্র হিসেবে সূর্যের গঠন হিসেবে জানা ছিল সাধারণত ইলেকট্রন, প্রোটন এবং কিছু নিউট্রন মৌলিক উপাদান হিসেবে থাকে। কিন্তু বেল ও হিউয়িশ দেকবলেন নতুন নক্ষত্রে তা নেই। নতুন এই ধরনের নক্ষত্র প্রায় ইলেকট্রন ও প্রোটন শূন্য। প্রায় পুরোটাই নিউট্রনে ভরা। তাই এর নাম দেওয়া হলো নিউট্রন স্টার। যদিও একথা আগেই জানা ছিল জ্যোতির্বিদদের- নিউট্রন স্টার মহাকাশে আছে। কিন্তু খুঁজে পাওয়া এই প্রথম। আসলে নিউট্রন স্টারও একসময় থাকে সাধারণ তারার মতোই। নক্ষত্রের আয়ুস্কালের শেষদিকে তারা থেকে আলো বের হয় না। বের হয় লম্বা আলোক তরঙ্গ। রেডিও তরঙ্গ। এই রেডিও তরঙ্গের সূত্র ধরেই প্রথম নিউট্রন স্টার শনাক্ত করেন বেল ও হিউয়িশ। আবার নিউট্রন স্টার থেকে সাধারণ নক্ষত্রের মতো নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে রেডিও তরঙ্গ আসে না। আসে ঝলকে ঝলকে। ঝলকের ইংরেজি প্রতিশব্দ পালস থেকে নিউট্রন স্টারের অপর নাম ‘পালসার’।
আমরা সুপারনোভার কথা শুনেছি। নক্ষত্রের শেষাবস্থায় সুপারনোভা বিস্ফোরণ ঘটে। এর মাধ্যমে সুবৃহৎ তারার বিবর্তনের অনেকগুলো সম্ভাব্য পরিনতির একটা হলো নিউট্রন স্টার। নিউট্রন স্টারে পরিনত হয়ে ভর অনেক বেড়ে যায় নক্ষত্রের। একটি সাধারণ নিউট্রন তারার ভর সাধারণত সুর্যের ভরের প্রায় ২.১ গুন হতে পারে। ( ধরা হচ্ছে এই নিউট্রন তারার ব্যাসার্ধ ১০ কিলোমিটার মতো, অর্থাৎ সূর্যের চেয়ে প্রায় ৭০০০০ গুন কম) সুতারাং বোঝা যাচ্ছে কি বিপুল ভর যুক্ত হয় নিউট্রন স্টার। নক্ষত্রের এ অবস্থায় ঘনত্ব হয় অত্যাধিক বেশি। প্রায় ৮*১০১৩ গ্রাম প্রতি ঘনসেন্টিমিটার পর্যন্ত ঘনত্ব হতে পারে একটি নিউট্রন স্টারের। এই ঘনত্ব পরমাণুর কেন্দ্রীয় ঘনত্বের সমান। প্রশ্ন হলো এই অত্যাধিক ভরের কারণ কী?
পরমাণুর গঠনের দিকে দেখলে বোঝা যাবে, পরমানুর সমস্ত ভরটাই থাকে নিউক্লিয়াসে। পরমানুর ভর হচ্ছে প্রোটন আর নিউট্রনের ভর। নিউক্লিয়াস মানে মোট ব্যাসের তুলনায় নগন্য। পরমানুর বাকি অংশ কিন্তু ফাঁকা। এমনকি প্রোটন ও নিউট্রনের মধ্যেও ফাঁকা স্থান থাকে। উল্টোদিকে নিউট্রন স্টারে নিউট্রন অত্যন্ত ঘন হয়ে থাকে। ফাঁক থাকার স্থান নেই। এই ঘনত্বের কারণের মাত্র ১ চামচ পরিমাণ নিউট্রন স্টারের ভর পৃথিবীতে হয়ে যাবে কয়েক কোটি টন।