
হঠাৎ টনটন করে ওঠা মাথাব্যথা এমন এক অনুভূতি তৈরি করতে পারে, যেন আপনার মস্তিষ্ক নিজের জন্য জায়গা দখলের লড়াই করছে। সম্প্রতি নতুন এক গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, এই অন্তর্দ্বন্দ্বের শিকড় হয়তো প্রাচীন নিয়ান্ডারথাল মানুষের খুলির গঠনগত বৈশিষ্ট্য। যা এখনও আমাদের মধ্যে রয়ে গেছে আমাদের বিলুপ্ত আত্মীয়দের উত্তরাধিকার হিসেবে। তাদের এই ধরণের খুলির গঠন আজকের মানুষের মস্তিষ্কের একটি জটিল রোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই রোগের নাম চিয়ারি ম্যালফরমেশন টাইপ ১. এ রোগে লঘুমস্তিষ্কের নীচের অংশ খুলির নীচের একটি ছিদ্র দিয়ে নেমে গিয়ে মেরুদণ্ডের উপর চাপ দেয়।
গবেষণাটি পরিচালনা করেন কিম্বারলি প্লম্প, ইউনিভার্সিটি অব দ্য ফিলিপিনস ডিলিমানের একজন গবেষক, এবং ব্রাজিলের নিউরোসার্জন ইভেন্স বারবোসা ফার্নান্দেজ। তাঁরা দেখান, যেসব মানুষ চিয়ারি রোগে আক্রান্ত, তাদের খুলির পিছনের হাড়টি (অক্সিপিটাল বোন) সাধারণের তুলনায় বেশি সমতল ও ছোট। এর ফলে লঘুমস্তিষ্কর জন্য প্রয়োজনীয় স্থান সংকুচিত হয়। গবেষকরা ৪৬ জন চিয়ারি আক্রান্ত মানুষের খুলির ত্রিমাত্রিক মডেল তৈরি করে সেটির তুলনা করেন ৫৭টি স্বাভাবিক খুলির ও ৮টি প্রাচীন মানবপ্রজাতির জীবাশ্মের সঙ্গে। দেখা যায়, চিয়ারি আক্রান্ত খুলিগুলির সঙ্গে নিয়ান্ডারথাল মানুষের খুলির সবচেয়ে বেশি মিল। কিন্তু আধুনিক মানুষের গোলাকৃতি খুলির সঙ্গে মিল বেশি হোমো ইরেকটাস, হোমো হেইডেলবারজেনসিস এবং প্রাচীন হোমো স্যাপিয়েন্সের খুলির। নিয়ান্ডারথালের মস্তিষ্ক আধুনিক মানুষের চেয়ে সামান্য বড়, তবে তাদের খুলির নীচের অংশ পিছনের দিকে ঢালু ছিল। এই গড়ন শক্তিশালী চোয়াল ও তার দুপাশের ফাঁপা গহ্বরের পক্ষে সুবিধাজনক হলেও লঘুমস্তিষ্কের স্থান সংকুচিত করত। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আজকের মানুষের মধ্যে ১-২% নিয়ান্ডারথাল ডিএনএ এখনো রয়ে গেছে এবং এর কিছু অংশ রোগ প্রতিরোধ, বিপাক প্রক্রিয়া, এমনকি খুলির গঠনেও প্রভাব ফেলতে পারে।
গবেষকেরা এখন চিয়ারি রোগীদের জিনগত তথ্য বিশ্লেষণ করে খুঁজছেন আদিম ডিএনএর উপস্থিতি — যা প্রমাণ করতে পারে যে নিয়ান্ডারথাল থেকে পাওয়া কিছু জিন আজকের স্বাস্থ্য সমস্যার পিছনে রয়েছে। যদি নির্দিষ্ট খুলির গঠন-সংক্রান্ত জিন শনাক্ত করা যায়, তবে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারগুলিকে আগে থেকেই চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। এই গবেষণার মাধ্যমে বোঝা যাচ্ছে, বিবর্তনের মাধ্যমে পাওয়া কিছু বৈশিষ্ট্য বর্তমানের মানুষের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে । বিশেষ করে সেইসব মানুষের ক্ষেত্রে, যারা আধুনিক জীবনে দীর্ঘ সময় ডেস্কে বসে কাজ করেন। ফলে মাথাব্যথা- বিশেষ করে কাশি, হাঁচি, বা চাপ দেওয়ার পরে ঘাড় ব্যথা, ভারসাম্য রাখার অসুবিধা ,মাথা ঘোরা,পেশীর দুর্বলতা বা অসাড়তা, গিলতে বা শ্বাস নিতে অসুবিধা প্রভৃতি শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। উন্নত পর্যবেক্ষণ ও জিনগত গবেষণার মাধ্যমে ভবিষ্যতে আগেভাগেই এই সমস্যাগুলি শনাক্ত করা সম্ভব হবে বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা।
সূত্রঃ Evolution, Medicine, and Public Health journal.