নিয়ান্ডারথাল শিশুর হাড় থেকে ডাউন সিণ্ড্রোমের প্রাচীন উদাহরণ পাওয়া গেল

নিয়ান্ডারথাল শিশুর হাড় থেকে ডাউন সিণ্ড্রোমের প্রাচীন উদাহরণ পাওয়া গেল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ জানুয়ারী, ২০২৫

অন্তত ১ লক্ষ ৪৬ হাজার বছর আগে, নিয়ান্ডারথালরা কোভা নেগ্রা নামে স্পেনের এক গুহায় কিছুদিন ছিল। এই সময় তারা পাখি বা অন্যান্য প্রাণী শিকার করত। নৃবিজ্ঞানীরা এই নিয়ান্ডারথালদের পড়ে থাকা হাড় অধ্যয়ন করতে গিয়ে মাথার খুলির একটা অংশ পান, যেখানে মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার লম্বা অন্তর্কর্ণের হাড় দেখেন। তারা জানান, এই হাড় একজন ৬ বছরের শিশুর। সাধারণত ডাউন সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কানের হাড়ে যে ধরনের ছোটো ছোটো অসঙ্গতি দেখা যায়, স্পেনের গুহার পাওয়া শিশুর কানের হাড়ের মধ্যে সেই ধরনের অসঙ্গতি রয়েছে। তাদের মতে শিশুটি সম্ভবত ডাউন সিন্ড্রোমে আক্রান্ত ছিল আর তার শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছিল। বিজ্ঞানীরা সায়েন্স অ্যাডভান্সেস-এ রিপোর্ট করেছেন, এটা ডাউন সিন্ড্রোমের সবচেয়ে প্রাচীন পরিচিত উদাহরণ। গবেষকরা জানান, এটা নিশ্চিত হলে, প্রাচীন নিয়ান্ডারথালরা তাদের সম্প্রদায়ের দুর্বল সদস্যদের প্রতি যত্নশীল ছিল তা বলা যেতে পারে।
ক্রাইটন ইউনিভার্সিটির অডিটরি নিউরোসায়েন্টিস্ট টার স্টেগার, ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বধিরতা নিয়ে গবেষণা করেন। তার মতে এই আবিষ্কার নিয়ান্ডারথাল সমাজের প্রতি একটা অন্তর্দৃষ্টি দেয়। ২১ নম্বর ক্রোমোজোমর একটা অতিরিক্ত প্রতিলিপি সৃষ্টির ফলে ডাউন সিন্ড্রোম হয়। ডাউন সিন্ড্রোমের ফলে বর্তমানে মানুষের মধ্যে আংশিক বা সম্পূর্ণ শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, তার সাথে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা এবং বিকাশগত বিলম্ব হতে পারে। এগুলোর তীব্রতা পরিবর্তিত হতে পারে, তবে এর অনেক উপসর্গ নিয়ান্ডারথালদের জন্য মোকাবিলা করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। উচ্চ-রেজোলিউশন স্ক্যানে ক্ষুদ্র আভ্যন্তরীণ কানের হাড়ের একটা সর্পিল অভ্যন্তর দেখা গেছে, যা অন্যান্য নিয়ান্ডারথালদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে ছোট। আভ্যন্তরীণ কানের জটিল গঠন থেকে অন্যান্য অস্বাভাবিক গঠন দেখে গবেষকরা বলছেন যে এই অস্বাভাবিকতা স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে ওই শিশু ডাউন সিন্ড্রোম নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছিল। আলকালা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিওনথ্রোপোলজিস্ট মার্সিডিস কন্ডে-ভালভার্দে বলেছেন তিনি ডিএনএ পুনরুদ্ধার করার আশা করছেন, যেখান থেকে দেখা যাবে শিশুর ২১ নম্বর ক্রোমোজোমের জোড়ায় অতিরিক্ত ক্রোমোজম ছিল কিনা।
এই হাড়ের অসামঞ্জস্যের ফল বর্তমান মানুষের মতো নিয়ান্ডারথালদের ক্ষেত্রেও একই হলে, যা হওয়ার সম্ভাবনা তা হল শিশুটির দলের অন্যান্য সদস্যদের সাথে সীমিত যোগাযোগ করার ক্ষমতা, ভারসাম্যের সমস্যা ও ভার্টিগোর জন্য হাঁটতে সমস্যা ছিল। হাড়ের মধ্যে দৃশ্যমান নয় এমন উপসর্গও থাকতে পারে, যেমন বুকের দুধ খাওয়ার সমস্যা। তাই শিশুটির ৬ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচার অর্থ হল কোভা নেগ্রার নিয়ান্ডারথালরা তাকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করেছিল। প্রত্নতাত্ত্বিকরা আগেও প্রমাণ পেয়েছেন নিয়ান্ডারথালরা বিশেষ চাহিদাযুক্ত ব্যক্তিদের যত্ন নিত। যেমন আধুনিক ইরাকের শানিদার গুহায় সমাধিস্থ একজন নিয়ান্ডারথাল ব্যক্তি প্রায় ৫০ বছর বয়সে দৃষ্টিশক্তি এবং শ্রবণশক্তি দুর্বল হয়ে মারা গিয়েছিল তার একটা হাত আংশিকভাবে কাটা ছিল, এমন পরিস্থিতিতে বাঁচার জন্য অন্যদের সাহায্য প্রয়োজন পড়ে। এই প্রমাণ থেকে অনেকের বক্তব্য ছিল, কিছুর বিনিময়ে হয়তো নিয়ান্ডারথালরা দুর্বল ব্যক্তিদের সাহায্য করত। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার গবেষক প্রত্নতাত্ত্বিক লোরনা টিলি বলেন, এই উদাহরণ দেখাচ্ছে সমস্ত ব্যক্তিদের জন্যই তারা সাহায্যের হাত প্রসারিত করত। এই গবেষণা প্রমাণ দেখায় যে নিয়ান্ডারথালরা জটিল পরিকল্পনা এবং বিমূর্ত চিন্তা করতে সক্ষম ছিল। যত্ন করার ক্ষমতা নানা দক্ষতার সূচক। এতে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার ক্ষমতা, যত্নের জন্য পরিকল্পনা করা, কোন কাজ করতে হবে, অন্যদের দিয়ে কোন কাজ করাতে হবে তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা যুক্ত। টিলি বলেন, এতে প্রচুর পরিমাণে জ্ঞানীয় পরিকল্পনা এবং চিন্তা করার ক্ষমতা যুক্ত থাকে। অতএব এই নিদর্শন নিয়ান্ডারথালদের পরার্থপরতার একটি উদাহরণ।