
মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা নোভার্টিস ফার্মাসিউটিক্যালসের সহযোগিতায় একটি যুগান্তকারী এবং পরিবেশ বান্ধব তড়িৎ-রাসায়নিক কৌশল তৈরি করেছেন। এই নতুন পদ্ধতিতে সুকৌশলে নির্মিত “সাবান” জল, প্রাকৃতিক অ্যামিনো অ্যাসিড এবং নারকেল তেল থেকে তৈরি “মাইসেল” ব্যবহার করা হয়েছে। এই মাইসেল বিদ্যুতের সাথে মিলিত হয়ে নিরাপদ, আরও টেকসই উপায়ে রাসায়নিক বিক্রিয়া চালায়। মাইসেল হলো এক বিশেষ ধরণের ক্ষুদ্র কণা যা দ্রবীভূত এবং একত্রিত হয়ে বলের মতো গোল আকৃতি তৈরি করে । এই কণাগুলি তাদের ভিতরে অন্যান্য পদার্থ বহন করতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে মাইসেলগুলি শরীরের কলা এবং কোষে ওষুধ বহনের কাজে লাগে।
বিষাক্ত দ্রাবক এবং তড়িৎবিশ্লেষ্যর (ইলেক্ট্রোলাইটের) উপর নির্ভরশীল চিরাচরিত তড়িৎ রাসায়নিক প্রক্রিয়ার বিপরীতে, এই পদ্ধতিটি একটি অ-বিষাক্ত বিকল্প এনে দিয়েছে। সহযোগী অধ্যাপক শচীন হান্ডা এবং তাঁর ছাত্রী করণজিৎ কৌরের নেতৃত্বে এই পদ্ধতিটি ওষুধ উৎপাদনের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে । এই গবেষণা ‘নির্মল শক্তি’ প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। এটি পরিবেশগত বিপত্তির মোকাবেলাতেও পটু হওয়ার সম্ভাবনা- যেমন জল থেকে পলিফ্লুরোঅ্যালকাইল পদার্থ (PFAS) প্রভৃতি স্থায়ী “চিরস্থায়ী রাসায়নিক”-র অপসারণ। এই গোলাকার বল আকৃতির কাঠামোর দুটি দিক রয়েছে: একটি জলের সাথে মিশে যায়, এবং অন্যটি এ-কে বিকর্ষণ করে। এদের অনন্য নকশা গবেষকদের দ্রাবক, তড়িৎবিশ্লেষ্য (ইলেক্ট্রোলাইট) এবং বিক্রিয়া ত্বরকের (বুস্টারের) চিরাচরিত ভূমিকাগুলিকে একটি সহজ হাতিয়ারে একত্রিত করে তড়িৎ রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলিকে আরও দক্ষ করে তুলতে সাহায্য করেছে।
হান্ডা এবং কৌর রাসায়নিক বিক্রিয়া চালানোর জন্য মাইসেলের জল এবং বিদ্যুৎকে সবুজ উৎস হিসেবে ব্যবহার করার উপায় খুঁজে বের করার প্রয়াসে এই কৌশলটি আবিষ্কার করেছিলেন । এই প্রক্রিয়াটি মাইসেলার তড়িৎ রসায়ন নামে পরিচিত।
মিজো’স কলেজ অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সে নিয়োজিত হান্ডা বলেন, “লক্ষনীয়, এই মাইসেলগুলি কাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়াগুলিকে ত্বরান্বিত করে কিন্তু কোনও কিছুর সাথে প্রতিক্রিয়া ঘটায় না । এগুলি স্থিতিশীল থাকে। এটাই এদের আয়ন-মাইসেল থেকে আলাদা করে দেয়। প্রক্রিয়াটিকে আরও কার্যকর করে তুললে, এই অগ্রগতি ওষুধের বিকাশকে উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।”
হান্ডা আরও বলেন, ইলেক্ট্রোক্যাটালিসিস (তড়িৎ অনুঘটক) নামে পরিচিত এই প্রক্রিয়া নির্মল শক্তি উৎপাদনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একই পদ্ধতিতে জল থেকে উৎপন্ন হাইড্রোজেনকে তাদের আদি অবস্থানেই একটি নির্মল জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। এছাড়াও, আমরা ক্ষতিকারক “চিরস্থায়ী” রাসায়নিকগুলিকে ভেঙে ফেলার জন্য হাইড্রোজেন ব্যবহার করতে পারি । সেগুলিকে দরকারী হাইড্রোকার্বনে রূপান্তরিত করার সাথে সাথে বাতাসে অক্সিজেন ছেড়ে দিতে পারি।”
স্থায়িত্ব এবং দক্ষতার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, এই নতুন রাসায়নিক কৌশল সরঞ্জামটি পরিবেশের উপর চিরাচরিত রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলির প্রভাব কমাতে পারে এবং সংরক্ষণের জন্য টেকসই সমাধানের সন্ধান দিতে পারে।
সূত্র : Electrocatalytic Micelle-Driven Hydrodefluorination for Accessing Unprotected Monofluorinated Indoles” by Karanjeet Kaur, Raki Mandal, Justin R. Walensky, Fabrice Gallou and Sachin Handa, 4 January 2025, Angewandte Chemie International Edition.
DOI: 10.1002/anie.202416132