প্রাকৃতিক কার্বনের পরিমাণের তুলনায় পৃথিবীতে মানুষের তৈরি জিনিসপত্র থেকে বেশি কার্বন সঞ্চিত হচ্ছে। আমরা এটা সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে সেই সঞ্চয় আরও বাড়াচ্ছি। গ্রোনিঞ্জেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশগত অর্থনীতিবিদ এবং সিনিয়র লেখক ক্লাউস হুবাসেক এ বিষয়ে জানিয়েছেন। বায়ুমণ্ডলে জীবাশ্ম থেকে প্রাপ্ত কার্বন কতটা নির্গত হয় সে সম্পর্কে অনেক কিছু জানা আছে, কিন্তু মানুষের তৈরি পণ্যগুলো থেকে কতটা কার্বন নির্গত হয়, তার সম্পর্কে বেশি জানা নেই। সেল প্রেস জার্নাল সেল রিপোর্টস সাসটেইনেবিলিটিতে প্রকাশিত গবেষণায়, পরিবেশগত অর্থনীতিবিদরা অনুমান করেছেন প্রতি বছর, মানুষের তৈরি নানা দীর্ঘস্থায়ী পণ্য যেমন প্লাস্টিক, বাড়ি, মানব অবকাঠামো থেকে প্রায় ৪০ কোটি টন জীবাশ্ম কার্বন যুক্ত হয়। এই পণ্যগুলো “কার্বন সিঙ্ক” হিসাবে বিবেচনা করলেও, পরিবেশগত বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।
মানুষের তৈরি শিল্পকর্ম, যা আমরা ব্যবহার করছি বা বাতিল করে দিয়েছি তা টেকনোস্ফিয়ার নামে পরিচিত। এই সঞ্চয় কতটা, আর কীভাবে বছরের পর বছর পরিবর্তিত হয়, তা জানতে গবেষকরা ২০১১ সালের তথ্য নিয়েছেন। একমাত্র এই বছর বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অর্থনৈতিক সেক্টর থেকে কতটা উপাদান ছিল, আর কতটা খরচ হয়েছে তার তথ্য মেলে। এখান থেকে তাঁরা নানা পণ্যের গড় কার্বন পরিমাণ দেখেছেন । যেমন প্লাস্টিক গড়ে ৭৪% জীবাশ্ম কার্বন ধারণ করে। বিশ্লেষণে কেবলমাত্র টেকসই প্লাস্টিক, বিটুমিনের মতো চূড়ান্ত পণ্য নয়, শিল্পে ব্যবহৃত মধ্যবর্তী পণ্য হিসেবে জীবাশ্ম কার্বন-ভিত্তিক ফিডস্টকগুলো বিবেচনা করা হয়েছে। বিল্ডিং এবং অবকাঠামো নির্মাণে সর্বোচ্চ ৩৪% জীবাশ্ম কার্বন সঞ্চিত হয়। রাবার এবং প্লাস্টিক পণ্যে জমে থাকা জীবাশ্ম কার্বনের পরিমাণ ৩০%, রাস্তা এবং ছাদে ব্যবহৃত বিটুমিনে ২৪%, এবং যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ১৬% জীবাশ্ম কার্বন সঞ্চিত থাকে। গবেষকরা দেখেছেন ২০১১ সালে, নিষ্কাশিত জীবাশ্ম কার্বনের ৯% টেকনোস্ফিয়ারের দীর্ঘস্থায়ী পণ্যগুলোতে জমা হয়েছিল।
১৯৯৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে টেকনোস্ফিয়ারে কতটা জীবাশ্ম কার্বন প্রবাহিত হয়েছিল তা অনুমান করতে গবেষকরা সেই সময়কালের আর্থিক তথ্য ব্যবহার করে, তা ২০১১ সালের ফলাফল মিলিয়েছেন। সামগ্রিকভাবে, তাঁরা অনুমান করেছেন যে ১৯৯৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে টেকনোস্ফিয়ারে ৮৪০ কোটি টন জীবাশ্ম কার্বন যুক্ত হয়েছে, যা ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী CO2 নির্গমনের প্রায় ৯৩%- এর সমান।
১৯৯৫ থেকে ২০১৯ সাল অবধি, টেকনোস্ফিয়ারে কার্বনের পরিমাণ বছর বছর বৃদ্ধি পেয়েছে। এই জীবাশ্ম কার্বন-ভিত্তিক পণ্যের মধ্যে অনেকগুলো আবর্জনার স্তূপে বা রাবিশে পরিণত হয়, যা পরিবেশে মিশতে বিশ তিরিশ বছর থেকে কয়েকশো বছর সময় লাগে। ভবন, অবকাঠামো এবং অন্যান্য পণ্যের গড় জীবনকালের উপর ভিত্তি করে, গবেষকরা অনুমান করেন যে সেই সময়ের মধ্যে ৩৭০ কোটি টন জীবাশ্ম কার্বনের মধ্যে ১২০ কোটি টন আবর্জনা হিসেবে ফেলা হয়েছিল, ১২০ কোটি টন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, ১১০ কোটি টন পুনর্ব্যবহৃত হয়েছিল এবং অবশিষ্টাংশ আবর্জনায় পরিণত হয়।
আবর্জনার স্তূপে জমা হলে, কার্বন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, আর পুড়িয়ে দিলে এর থেকে কার্বন নির্গমন হয়ে পরিবেশগত বিপদ সৃষ্টি হবে, বলে জানিয়েছেন গ্রোনিঞ্জেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহলেখক এবং পরিবেশগত অর্থনীতিবিদ ফ্রাঙ্কো রুজেনেন্টি। গবেষকরা জানিয়েছে, বর্জ্য জীবাশ্ম কার্বনের পরিমাণ কমানোর দুটো উপায় হল পণ্যের জীবনকাল এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য হার বৃদ্ধি করা। তাঁরা আবর্জনার স্তূপ থেকে বর্জ্য নিষ্কাশন কমানোর জন্য নীতি প্রণয়নের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন।