
কাঁটাবিহীন, রোগপ্রতিরোধী সুস্বাদু ব্ল্যাকবেরি উৎপাদন খুব শীঘ্রই বাস্তবায়িত হবে। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন জেনেটিক গবেষণা এই ইঙ্গিতই দিচ্ছে। গত দুই দশক ধরে ব্ল্যাকবেরির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য এবং কৃষি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট UF/IFAS এর গবেষক ঝানাও ডেং উল্লেখ করেন, “সামগ্রিকভাবে এই গবেষণাটি শুধু যে কালোবেরির জিন সম্পর্কিত ধারণাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে তা নয় বরং কালোবেরির প্রজনন কৌশলে উল্লেখযোগ্য উন্নতিরও সহায়ক হবে”। ২০০২ সালের UF/IFAS কৃষি শুমারি অনুসারে, ফ্লোরিডায় ২৭৭টি খামারে, ৭০২ একর জমিতে কালোবেরি উৎপাদন করা হয়। উন্নত কালো বেরির ক্ষেত্রে, এই উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে স্বাস্থ্য সচেতন ভোক্তা এবং চাষী যারা ফসলের উচ্চ মূল্য আশা করেন, উভয়ই উপকৃত হবেন। ড্যাং এবং তার দল, BL1 নামক একটি ট্রেটোপ্লয়েড (যে জীবদেহে চার সেট ক্রোমোজোম থাকে) কালোবেরি নির্বাচনের জন্য প্রথম ক্রোমোজোম-স্কেল হ্যাপলোটাইপ-সমাধানযুক্ত জিনোম তৈরি করেন। অক্সফোর্ড ন্যানোপোর সিকোয়েন্সিং এবং হাই-সি ক্যাফেন্ডিং ব্যবহার করে, তারা ২৭ টি সিউডো ক্রোমোজোম জুড়ে, সম্পূর্ণ একটি ৯১৯ মেগাবেসের জিনোম একত্রিত করেন। এই সমাবেশে, আনুমানিক জিনোম দৈর্ঘ্যের ৯২ শতাংশের বেশি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। BL1 জিনোমে ৮৭,৯৬৮টি প্রোটিন-কোডিং জিন রয়েছে।। এর মধ্যে ৮২% এর বেশি জিনোমে কার্যকরী টিকা রয়েছে যা ভবিষ্যতের কালোবেরির প্রজননের জন্য বিশেষ সহায়ক। কালোবেরি সাধারণ উদ্ভিদ নয়। এদের এই জিনগত জটিলতা, পূর্ববর্তী জিনোম-প্রকল্পগুলিকে কঠিন করে তুলেছিল। কাঁটাযুক্ত বেরির ক্ষেত্রে, অনেকসময়ই ফল তোলার প্রক্রিয়া জটিল হয়ে যায়, বেরি নষ্ট হয় এবং শ্রমিকদের জন্য ঝুঁকি তৈরি হয়। গবেষকেরা, কালোবেরি কেন কাঁটাযুক্ত হয় সেই জেনেটিক কারণগুলিকে চিহ্নিত করেছেন এবং সম্পর্কিত প্রতিলিপিগুলিকে অধ্যয়ন করছেন। তাদের গবেষণায়, অ্যান্থোসায়ানিন উৎপাদন নিয়ন্ত্রণকারী মূল জিনগুলি চিহ্নিত হয়েছে। কালোবেরির সমৃদ্ধ গাঢ় বেগুনি বা কালো রং এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের বৈশিষ্ট্যের মুলে রয়েছে এই অ্যান্থোসায়ানিনগুলিই। ডেং বলেন, “এই আবিষ্কারগুলি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে কেন কালোবেরি সময়ের সাথে সাথে তাদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রং ধারণ করে এবং কিভাবে পুষ্টিকর বেরির জন্য এই প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করা যায়! ” দলটি শত শত রোগ প্রতিরোধক জিন বিশেষ করে NLR এবং MLO জিন পরিবারকে সনাক্ত করেছে। রাসায়নিক কীটনাশকের উপরে না নির্ভর করে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ নিয়েই বেরিগুলি উৎপন্ন। ফ্লরিডার চাষিরা প্রায়শই কমলা আখের দাগ, পাতার দাগের মতন রোগের ঝক্কির মুখোমুখি হন। এক্ষেত্রে তারা প্রচুর উপকৃত হতে পারেন। প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন গাছগুলি উৎপাদনের খরচ কমাবে এবং পরিবেশগত প্রভাবও কমাবে। গবেষণার আরেকটি লক্ষ্য, প্রাইমোকেন ফলনশীল জাতগুলি বছরে, একাধিকবার ফলন দিতে পারে এবং অপরদিকে যাতে বৈচিত্র্যপূর্ণ জলবায়ুতেও এরা খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এই বৈশিষ্ট্যগুলির সাথে সংযুক্ত জিনের পরিমাপ করে বিশ্লেষণ করা হয়। ডেং- দল দ্বারা তৈরি উপাত্ত জিন, কালোবেরি উন্নত করার বিশাল সম্ভাবনা উন্মোচন করে। কাঁটাহীনতা, রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা এবং অ্যান্থসায়ানিন উৎপাদন সম্পর্কে তাদের বিস্তর গবেষণা, বিভিন্ন জলবায়ু এবং বাজারের জন্য উপযুক্ত কালোবেরি প্রজনন করতে সাহায্য করবে। ফ্লোরিডা এবং দক্ষিণ-পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এই অগ্রগতি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় কৃষকরা, এমন কালোবেরি চাষ করতে পারবেন, যা দেখভাল করা সহজ, রোগ প্রতিরোধক এবং উচ্চ বাজারজাত হবে। এই গবেষণা কেবল ফ্লোরিডার জন্য উপকারী নয়, বরং বিশ্বজুড়ে ব্ল্যাকবেরি উৎপাদনকে নতুন রূপ দেবে।
কালোজাম আর ব্ল্যাকবেরি এক নয়। এটা ঠিক করে দেওয়া হোক।