সমুদ্রের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ওপর গবেষণা করা বিজ্ঞানী দিব্যা পানিকার ২০১৯-এর এক গ্রীস্মের দুপুরে নিবিষ্ট হয়ে শুনছিলেন সমুদ্রের নীচে বসানো রেকর্ডারে নানারকমের আওয়াজ। লাক্ষাদ্বীপে, আরব সাগরের নীচে বসানো ছিল সেই রেকর্ডার। দিব্যা পরে জানিয়েছেন সেই দুপুরটা তার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ, অনেকরকমের কর্কশ আওয়াজের মধ্যে একটি নীল তিমির গলার আওয়াজও রেকর্ডিং হয়ে গিয়েছিল সেই রেকর্ডারে! আরব সাগরে নীল তিমি! সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ছিল তার কাছে। দিব্যার অনুমান, দু’টো নীল তিমি ছিল সেদিন সমুদ্রের নীচে। বিজ্ঞানীর মতে ওদের গানগুলো ছিল তিন নোটের আর রেঞ্জ ৩০ থেকে ১০০ হার্স্টের মধ্যে। দিব্যা পাণিকারের মতে, ২০১৮-র শেষ থেকে ২০২০-র প্রথম-এই সময়ের মধ্যে হওয়া গবেষণা থেকে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হচ্ছেন যে, এপ্রিল এবং মে মাসে লাক্ষাদ্বীপে নীল তিমি ছিল। কিন্তু তারা ওই সময় লাক্ষাদ্বীপ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিল না জল খাচ্ছিল সেটা দিব্যা পাণিকার বুঝতে পারেননি। সমুদ্রবিজ্ঞান নিয়েও পড়াশুনো করছেন দিব্যা। জানিয়েছেন নীল তিমির ব্যবহার ও চরিত্র বুঝতে কয়েকবছরের গবেষণার প্রয়োজন। কিন্তু নির্দিষ্ট ওই সময়ে লাক্ষাদ্বীপে নীল তিমি যদি প্রত্যেকবছর থাকে তাহলে লাক্ষাদ্বীপের ট্যুরিজমের জনপ্রিয়তা আরও বাড়তে পারে। মানুষ জানতে পারলে ওই সময়ে লাক্ষাদ্বীপে যাবেন। লাক্ষাদ্বীপের নীল সমুদ্র, প্রবাল প্রাচীর, দ্বীপের সৌন্দর্যের সঙ্গে নীল তিমি দেখার আকর্ষণ বাড়তি পাওনা হতে পারে ভ্রমণার্থীদের। আরও এক সমুদ্রবিদ, দীপানি সুতারিয়া। তিনি ভারত মহাসাগরে কুঁজো তিমি নিয়েও গবেষণা করেন। তিনি জানিয়েছেন, লাক্ষাদ্বীপে নীল তিমির যে গান শোনা গিয়েছে সেটা আসলে পুরুষ বন্ধু তিমি খোঁজার ডাক। দীপানির মতে, বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে আরব সাগরের ওই অঞ্চলটা নীল তিমিদের প্রসবভূমি হয়। দীপানি ২০২১-এ-ও কেরলের আরব সাগরে নীল তিমির সন্ধান পেয়েছিলেন। তখনও সে একইভাবে গান গাইছিল। তাতে ধারণাটা আরও বদ্ধ হয়েছে যে, প্রতি বছরই এপ্রিল-মে মাসে আরব সাগরের নীল জলে শোনা যাবে নীল তিমির গান!