নোংরা জলাজমির ছত্রাক নাকি টিবি জীবাণুর যম

নোংরা জলাজমির ছত্রাক নাকি টিবি জীবাণুর যম

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস নামক ব্যাকটেরিয়া টিবি রোগের জন্য দায়ী। বর্তমানে টিবির চিকিৎসায় কয়েক মাস টানা রোজ অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে যেতে হয়। তার হ্যাপা অনেক। এর স্বল্পকাল স্থায়ী চিকিৎসার একটা বন্দোবস্ত করতে পারলে কতই না ভালো হয়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট্‌স অব হেলথ-এর গবেষকরা এ সমস্যার মোকাবিলায় উঠেপড়ে লেগেছেন। প্লস বায়োলজি পত্রিকায় তাঁদের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাঁরা জানাচ্ছেন, নোংরা জলাজমি থেকে হয়তো টিবি রোগের এক নতুন চিকিৎসার হদিশ মিলবে। পচা উদ্ভিজ্জ পদার্থে ঠাসা নোংরা জলাজমিগুলো পরস্পর-প্রতিদ্বন্দ্বী প্রচুর প্রজাতির জীবাণুতে পূর্ণ। তারা একে অপরের সঙ্গে লড়াই করে। টিবি রোগীর ফুসফুসের পরিবেশের সঙ্গে এইসব জলাজমির পরিবেশের বেশ মিল আছে। এগুলিও অম্লপ্রধান, এগুলিও পুষ্টির এবং অক্সিজেনের অভাবগ্রস্ত। এইসব মিল দেখে একদল গবেষক অনুসন্ধান করতে শুরু করেন কীভাবে এইসব জলাজমির ছত্রাকরা মাইকোব্যাকটেরিয়াম প্রজাতির ব্যাকটেরিয়াদের প্রতিহত করে। ছত্রাকদের দেহ থেকে বিপাক-ক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণ আনুষঙ্গিক পদার্থ বেরোয়। সেই সব হাজার হাজার পদার্থ থেকে কোনটা কোনটা বেছে নিলে মাইকোব্যাকটেরিয়াম প্রজাতির জীবাণুদের কাবু করা যায় সেটা ছত্রাকরা জানে। একটা আশ্চর্য ঘটনা লক্ষ্য করে গবেষকরা অবাক হয়ে যান। পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কহীন তিনটে ছত্রাক এ সমস্যার মোকাবিলায় তিনটে আলাদা পদার্থ উৎপাদন করে যেগুলোর ক্রিয়া হুবহু এক। কখন তারা এ পদার্থগুলো উৎপদন করে? ঠিক যখন তারা মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকুলোসিস জীবাণুর দ্বারা আক্রান্ত হয়। জলাজমি থেকে ১৫০০ প্রজাতির ছত্রাক সংগ্রহ করে নিয়ে এসে ল্যাবরেটরিতে সেগুলোর সঙ্গে একত্রে মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবাকুলোসিসের বংশবৃদ্ধি ঘটাতে লাগলেন গবেষকরা। দেখা গেল তার মধ্যে পাঁচ প্রজাতির ছত্রাক ওই ব্যাকটেরিয়ামটির ওপর বিষক্রিয়া ঘটাচ্ছে। এর থেকে তিনটে মূল যৌগকে শনাক্ত করা গেলঃ পাটুলিন, সিট্রিন আর নিডুলালিন-এ। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, অধিকাংশ প্রকৃতিজ পদার্থের মতো এগুলিও সরাসরি মানুষের কাজে লাগবে না, ওষুধ হিসেবে মুখ দিয়ে খাওয়া যাবে না। এবার তাহলে বিজ্ঞানীদের কাজ হবে এমন সব যৌগ শনাক্ত করা যারা ঠিক একই কাজ করবে কিন্তু ওষুধ হিসেবে নিরাপদ। অতীতেও এভাবেই এগিয়েছে গবেষণা। এরই মধ্যে এমন কতকগুলি যৌগ পাওয়া গেছে যারা ঠিক ওইভাবেই কাজ করে। এইবার তাদের মানুষের ওপর প্রয়োগ করে পরীক্ষানিরীক্ষা করার পালা। আশার কথা, সন্দেহ নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven + four =