নোরোভাইরাস নিয়ে দু-চার কথা

নোরোভাইরাস নিয়ে দু-চার কথা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ জানুয়ারী, ২০২৫

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি রোগ বেশ সাধারণ। হঠাৎ ঘুম থেকে উঠলেই পেটে ব্যথা, তারপর বমি বমি ভাব, পেট ফাঁপা, বমি এবং ডায়রিয়া। এরপর এক বা দুদিনের মধ্যে, বাড়ির সকলের একই লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করে। পেটের সমস্যার এই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার লক্ষণ প্রায়শই নোরোভাইরাসের কারণে ঘটে থাকে, যা ‘স্টমাক বাগ’ বা “পেটের ফ্লু” নামে পরিচিত।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশান (সিডিসি) অনুসারে, নোরোভাইরাস খুবই সংক্রামক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্যবাহিত অসুস্থতার প্রধান কারণ। সংক্রামিত ব্যক্তির সরাসরি সংস্পর্শে এলে বা দূষিত পৃষ্ঠের মাধ্যমে ভাইরাসটি সহজেই ছড়িয়ে পড়ে, এমনকি সংক্রামিত ব্যক্তির লক্ষণগুলো চলে যাওয়ার পরেও অন্যান্যরা এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। সচরাচর শীতকালে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি ঘটে তবে বছরের যে কোনও সময় যে কেউ নোরোভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। সংক্রমিতের সংস্পর্শে এলে তো ছড়াবেই। কিন্তু তা ছাড়াও খাবার, পানীয় থেকে ছড়ায় নোরোভাইরাস। করোনার মতোই হাতে ভাইরাস এলে তা মুখ, নাক দিয়ে পৌঁছে যেতে পারে শরীরের অন্দরে।
নোরোভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য কয়েকটি অভ্যাস করে নেওয়া জরুরি। করোনার সময় যেমন আমরা বার বার হাত ধুয়ে ফেলতাম এ ক্ষেত্রেও সেটা করা খুব জরুরি কারণ নোরোভাইরাস খুব দ্রুত ছড়ায়। সাবানজল দিয়ে নিয়মিত হাত পরিষ্কার রাখতে হবে। তবে, সাধারণ ক্লিনজারগুলো নোরোভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করবে না। কারণ অ্যালকোহল-ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার, শুধুমাত্র আবরণযুক্ত ভাইরাসের মতো কিছু নির্দিষ্ট ধরনের ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর। প্রতিটি ভাইরাসের জিনগত উপাদান থাকে – ডিএনএ বা আরএনএ – যা ক্যাপসিড নামের একটি প্রোটিন আবরণে আবৃত থাকে। ইনফ্লুয়েঞ্জা বা কোভিড-১৯ এর ভাইরাসে ফসফোলিপিড বাইলেয়ার নামে একটি প্রতিরক্ষামূলক বাইরের আবরণ আছে। অনেকটা মানব কোশকে ঘিরে থাকা ঝিল্লির মতো। এই আবরণের অনুপস্থিতিতে এই ভাইরাসগুলো হোস্টের দেহের কোশের সাথে সংযুক্ত হতে পারেনা বা সংক্রামিত করতে পারে না। অ্যালকোহল-ভিত্তিক ক্লিনজারগুলো সেই বাইরের আবরণ নষ্ট করে ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে তোলে। কিন্তু অ্যালকোহল-ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ক্লিনার এবং ক্লিনজিং ওয়াইপগুলো নোরোভাইরাসের মতো আবরণহীন ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে না। তাদের এই ফসফোলিপিড আবরণের প্রয়োজন হয় না এবং তারা হোস্টের কোশ আক্রমণ না করেও কোনও বস্তুর পৃষ্ঠের উপর অনেক বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারে। পৃষ্ঠের ধরনের উপর ভিত্তি করে নোরোভাইরাস পৃষ্ঠের উপর কয়েক দিন বা সপ্তাহ বেঁচে থাকতে পারে। তাই এই ভাইরাস রোধে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া জরুরি। সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার সময়, সাবান ভাইরাসের কণাগুলোকে ঘিরে ধরে তাদের ত্বক থেকে ধুয়ে ফেলে। অন্যদিকে আশপাশের আসবাবপত্র বা বস্তুর পৃষ্ঠ পরিষ্কার করতে বা ভাইরাসকে সম্পূর্ণরূপে নিষ্ক্রিয় করতে ব্লিচের মতো শক্তিশালী ক্লিনজার প্রয়োজন। তাছাড়াও কোনও খাবার খাওয়ার আগে থালা-বাটি, চামচ, হাতা ধোয়ার কথা মাথায় রাখতে হবে। কারণ, যে কোনও বস্তুতে ভাইরাস থাকলে তা সঙ্গে সঙ্গে শরীরে ঢুকে পড়ে। ভাইরাসের সঙ্গে লড়তে হলে শরীর আর্দ্র রাখতে হবে। না হলে আরও বেশি করে ছড়াতে পারে ভাইরাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

six + 4 =