ন্যানোবুদবুদের গবেষণায় অগ্রগতি

ন্যানোবুদবুদের গবেষণায় অগ্রগতি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৪ জুলাই, ২০২৫

‘ন্যানোবুদবুদ’ একটি চুলের চেয়েও ছোট। এরা বড় বুদবুদের চেয়ে বেশি স্থিতিশীল। তাই ফেটে না গিয়ে দ্রবণে বেশিক্ষণ ধরে থাকতে পারে । ন্যানোবুদবুদের এই স্থায়িত্ব এবং বিভিন্ন শিল্পে তাদের ব্যবহারিক প্রয়োগের বিষয়ে গভীরভাবে অনুসন্ধান করেছে নতুন এক গবেষণা। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন কেন ন্যানোবুদবুদের দ্রবণ স্থিতিশীল থাকে, যার ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের ব্যবহার সম্ভব হয়। যেমন হাইড্রোপনিক্স-এ, যা হল পুষ্টিসমৃদ্ধ জলীয় দ্রবণ ব্যবহার করে মাটি ছাড়াই গাছপালা জন্মানোর একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ন্যানোবুদবুদগুলি জলের অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায়, যাতে স্বাস্থ্যকর এবং বেশি পরিমাণ ফলন হয়। ব্যাটারি, কৃষি এবং অন্যান্য উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও এর প্রয়োগ বিস্তৃত। অনেক রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্য বিভিন্ন গ্যাস অত্যাবশ্যক। বুদবুদগুলি এইসব গ্যাসকে দ্রবণে ধরে রাখার একটি উপায়। এর ফলে দ্রবণে গ্যাসের উচ্চ ঘনত্ব বজায় থাকে, যা রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটার জন্য আরও সময় করে দেয়। ড. হামিদরেজা সামোইয়ের নেতৃত্বে টেক্সাস এএন্ডএম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ন্যানোবুদবুদগুলি এত স্থিতিশীল হয়ে ওঠার কারণ অনুসন্ধান করে তাদের শনাক্ত করেছেন। তাঁদের সাম্প্রতিক আবিষ্কারগুলি দ্য জার্নাল অফ ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রির সর্বশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে।

ন্যানোবুদবুদগুলির স্থিতিশীলতার ব্যাপারটি বোঝা একটি বৃহত্তর গবেষণা-ধাঁধার এক ছোট অংশ। পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের হ্যারল্ড ভ্যান্স-এর গবেষণা সহকারী অধ্যাপক সামোই বলেন, “যখন আমরা শিল্পোৎপাদনের ব্যাপক মাত্রায় গ্যাস প্রবিষ্ট করি, তখন সেই গ্যাস নষ্ট করতে চাই না, রাসায়নিক বিক্রিয়ার জন্যই এর সর্বাধিক ব্যবহার করতে চাই । এটাই মূল উদ্দেশ্য, গ্যাসকে খুব দীর্ঘ সময় ধরে, আদর্শভাবে দ্রবণে রাখা ।”
গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন যে ন্যানোবুদবুদগুলির স্থায়িত্ব মূলত তাদের বৈদ্যুতিক চার্জ এবং দ্রাবকের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার উপর নির্ভর করে। ন্যানোবুদবুদগুলির স্থায়িত্ব দ্রবণে যেকোনো সংযোজন দ্বারাও প্রভাবিত হয়।
দ্রবণে গ্যাস ধরে রাখার ক্ষমতা ন্যানোবুদবুদগুলিকে বাস্তব জগতে অনেক ব্যবহারিক প্রয়োগের ক্ষেত্রে অপরিহার্য করে তোলে। যথা বর্জ্য জল পরিশোধন, হাইড্রোপনিক্স এবং জীবাণুনাশক। হাইড্রোপনিক চাষে ন্যানোবুদবুদ ব্যবহার করলে সাধারণ উদ্ভিদের তুলনায় গাছপালা অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। কারণ তারা জলে আরও বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করে, যা ফসলের উন্নতির জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। এছাড়া গবেষকরা লবণাক্ত জলের দ্রবণে কার্বন ডাই-অক্সাইড ঢুকিয়ে দিয়ে দ্রবণ থেকে বিভিন্ন খনিজ পদার্থ বের করে আনছেন। এইভাবে সংগৃহীত খনিজ পদার্থ নোনাজাল খননকার্য (ব্রাইন মাইনিং) নামে পরিচিত। এটি লিথিয়াম ব্যাটারি এবং ম্যাগনেসিয়াম সার প্রভৃতি বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। সামোই জানিয়েছেন, “এই প্রকল্পের জন্য, আমরা কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব বাড়ানোর একটি উপায় বার করতে চেয়েছিলাম, তাই ন্যানোবুদবুদগুলি ব্যবহার করেছি। এখন আমরা ন্যানোবুদবুদগুলির আয়ুষ্কাল কীভাবে বাড়ানো যায় তা আরও ভালভাবে বুঝতে পেরেছি, তাই এগুলি নোনাজল খননকার্যের (ব্রাইন মাইনিং) অনুশীলনে একটি মূল হাতিয়ার হবে।”

সূত্র: “Polarizing Perspectives: Ion- and Dipole-Induced Dipole Interactions Dictate Bulk Nanobubble Stability” by Mohammadjavad Karimi, Gholamabbas Parsafar and Hamidreza Samouei, 11 July 2024, The Journal of Physical Chemistry B.
DOI: 10.1021/acs.jpcb.4c03973

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × four =