বিজ্ঞানীরা এমন এক ধরনের ন্যানো-ক্রিস্টাল আবিষ্কার করেছেন যার ভিতর থেকে শুধু যে আলো বেরোয় তাই নয়, তারা আলো থেকে অন্ধকারে গিয়ে আবার নিমেষে আলোয় ফেরার ক্ষমতা রাখে। এগুলোকে বলা হয় সম্প্রপাত (অ্যাভালান্শ) ন্যানো-কণা। এর ফলে আলো-ভিত্তিক কম্পিউটারের পরবর্তী প্রজন্মের বিকাশ এক মস্ত ধাপ এগিয়ে গেল। শুধু তাই নয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এবং তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও ব্যাপক উন্নতির পথ প্রশস্ত হল। আমেরিকার লরেন্স বার্কলি ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি, ওরেগন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় আর মাদ্রিদের অটোনোমাস বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা মিলে এই আবিষ্কার করেছেন। ন্যানো-কণা হল অতিক্ষুদ্র কণা। এর দৈর্ঘ্য এক মিটারের ১০০ কোটি ভাগের একভাগ থেকে শুরু করে ১০০০০ কোটি ভাগের এক ভাগের মধ্যে। এদের ওপর লেজার ফেললে এরা উদ্দীপিত হয় এবং আলো নির্গত করে। সেই উদ্দীপক লেজারের তীব্রতা সামান্য একটু বাড়ালে ন্যানো-কণা থেকে নির্গত আলোর তীব্রতা প্রচণ্ডভাবে বেড়ে যায়। পটাশিয়াম, ক্লোরিন আর সীসা (লেড) দিয়ে তৈরি নিওডাইমিয়াম-মেশানো ন্যানো-কেলাস নিয়ে তাঁরা গবেষণা করেছেন। সাধারণভাবে ভেতর থেকে আলো-বেরোনো পদার্থগুলি থেকে আলো তখনই বেরোয় যখন তাদের লেজার দিয়ে উদ্দীপিত করা হয়; লেজার উদ্দীপনা বন্ধ করে দিলে তারা অন্ধকার হয়ে যায়। পটাশিয়াম আর লেড ক্লোরাইড নিজে থেকে আলোর সঙ্গে ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটায় না। কিন্তু নিওডাইমিয়ামকে আশ্রয় দিয়ে যখন তারা আশ্রয়দাতা হয়ে ওঠে, তখন নিওডাইমিয়াম-এর অতিথি আয়ন মারফত আলোক-সংকেত নিয়ে তারা নিপুণভাবে কাজ করে। সেই কারণে আলোক-ইলেকট্রনিক্স, লেজার প্রযুক্তি এবং অন্যান্য আলোক-প্রযুক্তিতে তারা কাজে লাগে। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, এই কেলাসগুলো যেন একাধিক সমান্তরাল জীবন যাপন করে। কোনো কোনো দশায় একই মাত্রার লেজার উদ্দীপনাতেই তারা হয় উজ্জ্বল, নাহয় অন্ধকার রূপ ধারণ করতে পারে। ভিতর থেকে আলো-বেরোনো এই কেলাসগুলোর এই অদ্ভুত আচরণকে বলা হয় দ্বৈত স্থিতিশীলতা (বাই-স্টেবিলিটি)। অন্ধকার দশায় শক্তিশালী লেজার ক্ষমতা প্রয়োগ করে এদের মধ্য থেকে আলো নির্গত করাতে হয়। কিন্তু তারপর তারা নিজেরাই আলো নির্গত করতে থাকে। প্রথম চোটে যে-ক্ষমতার লেজার প্রয়োগ করতে হয়েছিল তার চেয়ে কম লেজার ক্ষমতা প্রয়োগ করেই তাদের আলো নির্গমন পর্যবেক্ষণ করা যায়। এ যেন অনেকটা সাইকেল চালানোর মতো। প্রথমে আপনাকে জোরে প্যাডেল চালাতে হবে, কিন্তু একবার চালু হয়ে গেলে আপনাকে আর খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না। আর নিমেষের মধ্যেই, যেন সুইচ টিপে, তাদের আলো বন্ধ করে দিয়ে আবার আলোয় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এর ফলে দূরসংযোগ (টেলিকমিউনিকেশন), মেডিকেল ইমেজিং, পরিবেশের সেনসিং, অপটিকাল এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো সম্ভব হবে। নেচার ফোটোনিক্স-এ এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র: Oregon State University. “New nanocrystal material a key step toward faster, more energy-efficient computing.” ScienceDaily. ScienceDaily, 3 January 2025. <www.sciencedaily.com/releases/2025/01/250103125043.htm>.