পড়াশোনাতে বুদ্ধিমত্তাই শেষ কথা নয়…

পড়াশোনাতে বুদ্ধিমত্তাই শেষ কথা নয়…

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের চিকিৎসক দ্বারা পরিচালিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণা প্রমাণ করেছে যে মোটিভেশন বা অনুপ্রেরণা এবং নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ এই দুই দক্ষতা পড়াশোনায় ভালো ফল করার ক্ষেত্রে ইন্টেলিজেন্স বা বুদ্ধিমত্তার মতো সমান গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণাটি নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ারে প্রকাশিত হয়। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে এই দক্ষতাগুলোর প্রভাব একটি শিশুর শিক্ষাকালীন সময় জুড়ে বিস্তার লাভ করে, এবং জেনেটিক্স তাদের বিকাশে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষজ্ঞদের আন্তর্জাতিক দলটি মনে করেন যে বৌদ্ধিক দক্ষতার পাশাপাশি অন্যান্য দক্ষতার বিকাশ শিক্ষার গুণমান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে।
লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানী ডঃ মালাচিনির মতে এই গবেষণা দীর্ঘদিনের অনুমানকে চ্যালেঞ্জ করে যে বুদ্ধিমত্তা শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নতির একমাত্র চালক। অন্যান্য দক্ষতা যেমন দৃঢ়তা, অধ্যবসায়, শেখার আগ্রহ এবং মূল্যবোধ শিখনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের সাথে সাথে এই দক্ষতার প্রভাব আরও শক্তিশালী হয়। ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে ৭ থেকে ১৬ বছর বয়সী ১০,০০০-এরও বেশি শিশুদের নিয়ে করা এই গবেষণায় জিন, পরিবেশ এবং অ্যাকাডেমিক পারফরম্যান্সের মধ্যে জটিল সংযোগ পরীক্ষা করার জন্য দুটি গবেষণা এবং ডিএনএ-ভিত্তিক বিশ্লেষণের তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষণায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে ফলাফল পাওয়া গেছে তার মধ্যে অন্যতম হল ব্যবহারিক দক্ষতা গঠনে জেনেটিক্সের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা এবং শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নতির উপর তার প্রভাব। ডিএনএ বিশ্লেষণ করে, গবেষকরা এই দক্ষতার জন্য একটি “পলিজেনিক স্কোর” তৈরি করেছেন। গবেষকদের মতে ব্যবহারিক দক্ষতা ও তার সাথে জিনগত প্রভাব স্কুল শিক্ষার সময়কালে ভালো ফলের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। ৭ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে এই প্রভাব প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। এই গবেষণা শিক্ষা অর্জনের চিরাচরিত দৃষ্টিভঙ্গিকে চ্যালেঞ্জ করে যেখানে অ্যাকাডেমিক সাফল্য মূলত বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। পরিবর্তে, গবেষণাটি পরামর্শ দেয় যে একটি শিশুর আবেগজনিত ও আচরণগত দক্ষতা, জিন এবং পরিবেশ উভয় দ্বারা প্রভাবিত, এবং শিশুটির পড়ালেখার সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণাটি পরিবেশের গুরুত্বের উপরও জোর দিয়েছে।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ঐতিহ্যগতভাবে বৌদ্ধিক উন্নতির ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। সময় এসেছে ব্যবহারিক দক্ষতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করার। তবেই আমরা সমস্ত শিক্ষার্থীদের জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং কার্যকর শিখন পরিবেশ তৈরি করতে পারবো।