পথ দেখাচ্ছে পেরু

পথ দেখাচ্ছে পেরু

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৮ আগষ্ট, ২০২১

কোভিড-১৯ গোটা পৃথিবীকেই বিধ্বস্ত করেছে। অভিভাবক হারানো এর অন্যতম। গোটা পৃথিবীতে প্রায় ১৬ লক্ষ শিশু হারিয়েছে বাবা বা মাকে। পিতৃ বা মাতৃহীনতাই শিশুদের জন্যে আরেক মহামারী – বলছেন গবেষকেরা। শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন শিশুদের ওপর বাবামায়ের অত্যাচার বাড়িয়ে তুলেছে। শিশুদের শারীরিক- মানসিক স্বাস্থ্য আহত হচ্ছে ক্রমাগত। কোভিড শেষ করে দিচ্ছে পরবর্তী প্রজন্মের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ।
সম্প্রতি ল্যানসেটের সার্ভেতে উঠে এসেছে লাতিন আমেরিকার পেরুর হৃদয়বিদারক ছবি। সার্ভে অনুযায়ী চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৯৩০০০ শিশু বাবা বা মাকে হারিয়েছে কোভিডে। প্রতি ১০০ জন শিশুর মধ্যে ১ জনেরও বেশি। প্রসঙ্গত পেরুতে আনুপাতিক হারে সবচেয়ে বেশি মানুষ কোভিড-১৯ এর বলি হয়েছেন। মোট মৃত্যু সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৯৭ হাজার। শিশু রয়েছে এক হাজার। লাতিন আমেরিকাতে স্কুলছুট শিশু সংখ্যা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি। শিক্ষা থেকে এই ছেদ অর্থনৈতিক বৈষম্যকে আরো বাড়িয়ে তুলে পরবর্তী প্রজন্মকে পেছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
পাশাপাশি অতিমারি যেসব পরিবারের উপার্জনকারী সদস্যকে কেড়ে নিয়েছে সেসব পরিবার আরও দারিদ্র্যের মুখে পড়ছে। যেমন পেরুর লিমার উত্তরপ্রান্তে পাহাড়ের পাদদেশে জীর্ণ কাঠের এক বাড়ির বাসিন্দা নিলডা লোপেজ কোভিডে হারিয়েছেন স্বামীকে। লোপেজ নিজেও কোভিড আক্রান্ত ছিলেন এবং সে অবস্থাতে ৬ মাসের গর্ভাবস্থায় সন্তান প্রসব করেন, তাঁকে কোমায় রেখে সন্তান ও মায়ের জীবন বাঁচান ডাক্তাররা। আগের দুটি ১২ বছরের সন্তান এবং ৬ মাসের শিশু সন্তানকে নিয়ে মা পড়েছেন মহা ফাঁপরে।
পেরুর সরকার চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে বাবা বা মা হারা শিশুর জন্যে ২০০ পেরুমুদ্রা পেনশন চালু করেছে। শিশুরা ১৮ বছর পর্যন্ত এই পেনশন পাবে। লোপেজের মতো মায়েরা যাকে বলছেন লাইফ-লাইন। এছাড়াও ‘সেভ চিল্ড্রেন অফ পেরু’স কোভিড রেস্পন্স প্রোগ্রাম’ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সব মিলিয়ে কোভিডে বিধ্বস্ত হয়েও খানিক আশার আলো দেখাচ্ছে পেরু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 7 =