পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে বিচ্ছুরিত নিউট্রিনো

পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে বিচ্ছুরিত নিউট্রিনো

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

এই প্রথমবার, পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে বিচ্ছুরিত নিউট্রিনোদের শনাক্ত করতে পেরেছেন গবেষকগণ । মৌলিক পদার্থবিদ্যার অভিনব এই পরীক্ষাটি যদিও চার দশক যাবত ঘোরাফেরা করছিল বিজ্ঞানীদের চিন্তায় । নগণ্য ভরের আজব কণিকা এই নিউট্রিনো, ভেসে বেড়াচ্ছে সারা পৃথিবী জুড়ে কিন্তু পদার্থের সাথে সচরাচর বিক্রিয়া করে না ।
‘সায়েন্স’কে দেওয়া প্রতিবেদনে এম আই টি’র পদার্থবিদ জেনেট কনরাড গবেষণাটিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই দাবী করেছেন । তিনি বলছেন, বৈজ্ঞানিক পরিমাপের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে গেলো। স্ট্যান্ডার্ড মডেলের অমীমাংসিত ধোঁয়াশা (নিউক্লাই-এর সাথে বিক্রিয়া করে নিউট্রিনো) কিছুটা সমাধান করতে পারল এই গবেষণার ফলাফল । ‘কোহেরেন্ট’- পরীক্ষাটিকে এই নামেই ডাকছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকবৃন্দ ।
নিউট্রিনোকে এতদিন পর্যন্ত পৃথকভাবে প্রোটন বা নিউট্রনের সাথেই বিক্রিয়া করতে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা । কিন্তু এই গবেষণা থেকে উঠে আসছে, বেশ সুসংহতভাবেই গোটা একটি নিউক্লিয়াসের সাথেই নিউট্রিনো বিক্রিয়া করে, ছিটকে আসে এবং ফলত নিউক্লিয়াসের কাঠামো কিঞ্চিৎ বদলে যায় ।
নিউট্রিনোকে একঝলক দেখার জন্যে গবেষকরা বড়ো বড়ো ডিটেক্টার তৈরি করতেন আগে । কণিকাটিকে শনাক্ত করার সম্ভবনাও ছিল কম । কিন্তু, কেবলমাত্র সিজিয়াম আর আয়োডিনের কেলাস দিয়ে ১৫ কিলোগ্রামের হালকা ডিটেক্টার বানিয়ে ফেলেছেন কোহেরেন্ট-এর কেট স্কোলবার্গ, হুয়ান কোলার ও তাঁদের টিম । টেনেসির ওক রিজ ন্যাশানাল ল্যাবরেটরির স্প্যালেশান নিউট্রন সোর্সে ডিটেক্টারটি চালিয়েছেন তাঁরা । লাইট সেন্সরে ধরা পড়ে যখন নিউট্রিনোর আঘাতে নিউক্লিয়াসের গঠন সামান্য পরিবর্তন হয় ।
ফলাফল এখনও পর্যন্ত স্ট্যান্ডার্ড মডেলের পক্ষে । আরও নিখুঁত পরীক্ষানিরীক্ষা করতে চান মিউনিখের ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইন্সিটিউটের পদার্থবিজ্ঞানী লিও স্টোডোলস্কি । ওনারা দেখতে চান, নিউট্রিনো কোন অবস্থায় গিয়ে স্ট্যান্ডার্ড মডেলের নিয়ম লঙ্ঘন করে, এবং সেই পর্যবেক্ষণ হয়তো ব্রহ্মাণ্ডের নতুন কোনো রহস্যের সন্ধান দেবে ।
নক্ষত্র বা সুপারনোভা বিস্ফোরণে কীভাবে এত বেশী সংখ্যায় নিউট্রিনো নিঃসরণ ঘটে, এই পরিক্ষা দিয়ে তাও জানা যাবে বলে মত বিজ্ঞানীদের । ডার্ক ম্যাটার চাক্ষুষ করার সম্ভবনাও আছে । নিউট্রিনোর মতই, ডার্ক ম্যাটারও পারমাণবিক নিউক্লিয়াস থেকে বিচ্ছুরিত হতে পারে, এবং একইভাবে নিউক্লিয়াসটি সংকুচিত হয় ।
১৯৭৪ সালে নিউট্রিনোর এই ছিটকে আসার ঘটনাটি যিনি প্রথম অনুমান করেন, এম আই টি’র পদার্থবিদ ড্যানিয়েল ফ্রিডম্যান স্বভাবতই উচ্ছ্বসিত গবেষণার এই ফলাফলে ।