পরিযায়ী পাখিদের অভিবাসনের পথ দেখাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা

পরিযায়ী পাখিদের অভিবাসনের পথ দেখাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ আগষ্ট, ২০২৪
পরিযায়ী পাখি

নর্দান বাল্ড আইবিসের চেহারাটা বেশ স্বতন্ত্র। মুখের রঙ লাল, মাথার ওপরে টাক, কিন্তু মাথার পিছন দিকে ঘাড় ও গলায় লম্বা লম্বা, সরু পালক। একসময় উত্তর আফ্রিকা, আরব উপদ্বীপ এবং ইউরোপের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে পাখিটিকে দেখা যেত। কিন্তু ব্যাপক পাখি শিকার এবং আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে তাদের সংখ্যা হ্রাস পায়। মধ্য ইউরোপে ৩০০ বছরেরও আগে তারা বিলুপ্ত হয়েছিল। বর্তমানে এরা ফিরে এসেছে – আর একটি ছোটো গ্লাইডারের সাহায্যে তাদের পালক বাবামা অর্থাৎ বিজ্ঞানীরা এই পাখিদের তাদের দীর্ঘ-বিস্মৃত অভিবাসনের পথে উড়তে শেখাচ্ছেন। এই বিপন্ন পাখিদের মধ্যে ছত্রিশটি বর্তমানে অস্ট্রিয়া থেকে স্পেন পর্যন্ত ২৮০০ কিমি পথ, একটি অতি হালকা উড়োজাহাজ অনুসরণ করছে। এই পথ অতিক্রম করতে পাখিদের ৫০ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। উড়ানের সময় বিজ্ঞানীরা মাইক্রোলাইটের পিছনে বসে, পাখিদের উড়তে উৎসাহ দেন। উড়োজাহাজের পিছনে একটি ছোটো ফ্যানের মতো মোটর আছে এবং একটি হলুদ প্যারাসুট এটিকে উপরে উড়তে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীদের মতে এই কৌশলটি ব্যবহার করে একটি পরিযায়ী প্রজাতির পুনঃপ্রবর্তনের এটি প্রথম একটি প্রচেষ্টা। গত দুই দশক ধরে পাখির প্রজনন সফল হয়েছে, তাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু শীতের সময় তাদের কোন দিকে উড়ে যেতে হবে সে সম্পর্কে পাখিদের কোনো ধারণা ছিল না। অভিবাসনের প্রাথমিক প্রচেষ্টা অনেকাংশে ব্যর্থ হয়েছিল। শীতকাল কাটিয়ে পাখিরা ইতালির টাস্কানির মতো উপযুক্ত শীতকালীন জায়গায় ফিরে আসার পরিবর্তে, বিভিন্ন দিকে উড়ে গিয়ে মারা যায়। অভিবাসনের জন্য প্রস্তুত করতে মাত্র কয়েক দিন বয়সী পাখির ছানাদের তাদের জন্মস্থান থেকে ভিন্ন জায়গায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিজ্ঞানীরা ধীরে ধীরে তাদের পালক পিতামাতা হয়ে ওঠেন, তাদের দেখাশোনা করেন। ফলে পাখিরা অভিবাসনের পথে বিজ্ঞানীদের অনুসরণ করত কারণ ততদিনে তাদের পালক বাবামায়ের উপর যথেষ্ট ভরসা তৈরি হয়ে গেছে। ২০০২ সালে প্রকল্পটি শুরু হওয়ার পর থেকে পাখিদের সংখ্যা ০ থেকে প্রায় ৩০০-তে পৌঁছে গেছে। ২০১১ সালে প্রথম পাখিটি মানুষের সাহায্য ছাড়াই টাস্কানি থেকে বাভারিয়ায় ফিরে এসেছিল। পাখিটির প্রথম প্রজন্ম ইতিমধ্যেই বনাঞ্চলে বংশবৃদ্ধি করেছে। তাদের সন্তানদের অভিবাসনের পথ শিখিয়েছে যা তারা মানুষের কাছ থেকে শিখেছে। কিন্তু জলবায়ু সঙ্কট এই অভিবাসনকে আরও চ্যালেঞ্জিং করে তুলছে। বিজ্ঞানীদের মতে প্রচেষ্টাটি কেবল নর্দান বাল্ড আইবিসের জন্য নয়: এটি অন্যান্য পরিযায়ী পাখিদের জন্যও পথ প্রশস্ত করে, সেই সব পাখিদের জন্য যারা আজ বিলুপ্তির করাল গ্রাসে তলিয়ে গেছে।