পরিযায়ী পাখিদের পথ দেখায় পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র

পরিযায়ী পাখিদের পথ দেখায় পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৯ জুলাই, ২০২৪
পরিযায়ী পাখিদের পথ দেখায় পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র

শীত পড়তেই শীতের দেশ থেকে গরমের দেশে উড়ে আসে পরিযায়ী পাখির দল। শীতের সময়ে শীতপ্রধান দেশগুলোতে ঠান্ডা বাড়ে। সেখান থেকে পাখিরা হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পেরিয়ে সাধারণত কম ঠান্ডার দেশে চলে আসে। আস্তানা গড়ে বিভিন্ন জায়গায়। কিছু দিন কাটিয়ে আবার ফিরে যায়। রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড থেকে শীতে আমাদের সুন্দরবন অঞ্চলেও আসে বহু পাখি। বকখালি, ভগবতপুর, গঙ্গাসাগরের রামকর চর, মাতলা, বিদ্যাধরীর চরে পরিযায়ী পাখিদের ভিড় দেখা যায়। বিকেলের পরে চরে কিচির মিচির শব্দে মন ভরে যায় সকলের। কিন্তু ভাবতে অবাক লাগে যে এই পরিযায়ী পাখিরা কীভাবে প্রতিবার পথ চিনে আসে বা ফিরে যায় নিজেদের ঠিকানায়। ভারতের বিজ্ঞানীরা তারই খোঁজ লাগিয়েছেন। তারা এক নতুনধরনের শক্তিশালী পরিসংখ্যান কৌশলের মাধ্যমে দেখেছেন পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র এই পাখিদের পথপ্রদর্শক। ১৯৬০-এর দশক থেকে পরিচিত এই প্রক্রিয়ার প্রমাণকে শক্তিশালী করেছেন তারা। আইএসআই কলকাতা, এবং বিশ্ব-ভারতী, শান্তিনিকেতনের বিজ্ঞানীরা দেখেছেন কীভাবে চৌম্বকীয় সংকেত কয়েক ঘণ্টা অন্তর অন্তর পাখিদের মধ্যে সূক্ষ্মভাবে দিকনির্দেশ করে ও তা পরিবর্তন করতে সাহায্য করে। যখন পরিযায়ী পাখিরা তাদের বাসা থেকে গন্তব্যের দিকে শত শত থেকে হাজার হাজার কিলোমিটার উড়ে যায় তখন তাদের পথ দেখায় চৌম্বকীয় সংকেত। শুকনো পাতার মর্মর ধ্বনির মতোই চৌম্বকীয় সংকেতগুলো পাখিদের মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করে, তাদের দিক পরিবর্তন করতে সহায়তা করে। গবেষকরা ছটি প্রজাতির পরিযায়ী পাখিদের বিশ্লেষণ করেছেন- ব্ল্যাক-বেলিড প্লোভার, ব্ল্যাক-ক্রাউন্ড নাইট হেরন, বাদামী পেলিকান, লং-বিলড কার্লিউ, প্যাসিফিক লুন এবং সোয়াইনসনস হক। আমেরিকার মহাদেশে এই পাখিদের অভিবাসনের পথ জুড়ে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিমাপ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের গবেষণাটি প্লস ওয়ান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ভারতীয় গবেষকরা বলেন যে তারা যে পরিসংখ্যান কৌশলগুলো নিয়েছেন তাতে পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি নির্ভুলভাবে দিকনির্দেশের কৌণিক পরিবর্তন বিশ্লেষণ করা যায়। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল ধরে দক্ষিণ দিকে উড়ে যাওয়া এই সোয়াইনসনস হক প্রতি তিন ঘণ্টা থেকে ২১ ঘণ্টায় তাদের যাত্রাপথে সূক্ষ দিক পরিবর্তন করে। এই ধরনের প্রতিটি দিক পরিবর্তন চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত। গবেষকরা এর সাথে শক্তিশালী বাতাস বা ঝড়ের কথাও মাথায় রেখেছেন যা পরিযায়ী পাখিদের ওড়ার পথকেও প্রভাবিত করতে পারে।
এর আগে ১৯৬০ সালে জার্মান গবেষকরা দেখেন ইউরোপীয় পাখি রবিন চৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তন শনাক্ত করতে পারে ও প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। তারপর থেকে, বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়াগুলোও চিহ্নিত করেছেন যা পাখিদের ওড়ার সময় দিকনির্দেশে সাহায্য করে যেমন পাখির চোখের প্রোটিন। বিজ্ঞানীরা মনে করেন পাখিদের এই ধরনের অভ্যন্তরীণ চৌম্বকীয় কম্পাস ব্যবহার করার ক্ষমতা সহজাত, অথবা তাদের জিনে তা গাঁথা আছে।