
গবেষণায় দেখা গেছে যেসব সুমধুরকন্ঠী পাখি প্রতি শীতে উত্তর বরিয়াল বনাঞ্চল থেকে ক্রান্তীয় বা গ্রীষ্মমন্ডলীয় গন্তব্যে দীর্ঘ পরিযান যাত্রা করে ,তারা শুধুমাত্র উষ্ণ আশ্রয়ই লাভ করে না বরং তাদের জিনগত বৈচিত্র্য তুলনামূলকভাবে বেশি হয়।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষকদল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বরিয়াল বনাঞ্চল নিবাসী ৩৫টি পাখির জিনোম বিশ্লেষণ করেন। তাঁরা দেখতে পান, যেসব পক্ষী প্রজাতি শীতকালে গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে অভিবাসনে যায় তাদের জিনগত বৈচিত্র্য, স্থানীয় অঞ্চলের পাখিদের তুলনায় অনেক বেশি হয়, স্পষ্টত আলাদাও হয়। এই দীর্ঘ পরিক্রমা শুধু টিকে থাকার জন্য নয় বরং তাদের উন্নত অভিযোজন ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
গবেষক দলটি ১৫ বছর আগে নমুনা সংগ্রহ শুরু করেন। তারা পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহের জন্য মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা যাদুঘর সহ একাধিক যাদুঘর সংগ্রহের তথ্য ব্যবহার করেছিলেন। দেখেছিলেন, অনেক পাখিরই নির্দিষ্ট প্রজননস্থানের সাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,সোয়াইনসেনের থ্রাশ(সুরেলা পাখি) ও হার্মিট থ্রাশ একই অঞ্চলে প্রজনন করলেও তাদের পরিযানের পথ আলাদা।সোয়াইনসেনের থ্রাশ দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত যায়, কিন্তু হার্মিট থ্রাশ কেবলমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে শীতকাল কাটায়।
আবার, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক টেরেসা পেগান বলেন, যদি কোনো পাখি অন্টারিওতে জন্মগ্রহণ করে তবে এটি চাইলে ম্যানিটোবায় যেতে খুব বেশি বাধা নেই। অথচ জেনেটিক বিশ্লেষণ ভিন্ন গল্প বলে। পেগান 1,700 জিনোম সিকোয়েন্স করেছেন এবং প্রতিটি প্রজাতির মধ্যে জেনেটিক নিদর্শনগুলি শনাক্ত করার জন্য একটি গণনা পদ্ধতি তৈরি করেছেন। দেখা যায়, এই পাখিরা সাধারণত নির্দিষ্ট প্রজননস্থানেই ফিরে আসে , যা তাদের জিনগত নির্দেশনগুলির মধ্যে সুনির্দিষ্ট সংযোগ তৈরি করেছে। এই দীর্ঘ পরিযায়ী পাখিরা তাদের সংখ্যার ক্ষেত্রেও দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়।
গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরে অভিবাসন এবং পাখির জেনেটিক্সের মধ্যে সম্পর্ক দেখে বিস্মিত ছিলেন, তবে এখনো পর্যন্ত অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতার কারণে পাখিদের জিনোম সেট বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়নি।গবেষণাটির মূল লক্ষ্য ছিল জিন প্রবাহ, অর্থাৎ পাখিদের মধ্যে জেনেটিক উপাদান স্থানান্তর এবং এটি কীভাবে অভিবাসন দ্বারা প্রভাবিত হয় তা বোঝা।
গবেষণাটি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। যেহেতু দীর্ঘ পরিযায়ী পাখিরা নির্দিষ্ট স্থানে ফিরে আসে , তাই এসব স্থান সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। গবেষকরা সতর্ক করেছেন যে, উত্তর আমেরিকার বনাঞ্চল গাছের গুঁড়ি কাটা ও উন্নয়নের জন্য বিপন্ন হয়ে পড়েছে , যা এই পাখিদের জীবনধারণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
এই অনুসন্ধান পরিযায়ী পাখিদের অভিযোজন ,স্থিতিশীলতা ও সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তাকে নতুনভাবে তুলে ধরে । গবেষকদের মতে এরা কেবলমাত্র দীর্ঘ দুরত্ব অতিক্রমই করছে না,বরং তারা প্রাকৃতিক পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য অধিক জিনগত বৈচিত্র্য বহন করে যা তাদের অভিযোজিত হতে সাহায্য করে।