২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসে নেচার পত্রিকার এক নিবন্ধে পশ্চিম অ্যান্টার্কটিক (কুমেরু) বরফের পাতের গলে যাওয়া আটকাতে ফিনিশ গবেষকরা এই বরফের পাতের নীচে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ১০০ মিটার উঁচু একটা ভূগর্ভস্থ পর্দা লাগানোর প্রস্তাব করেছিলেন। এতে সমুদ্রের উষ্ণজল হিমবাহের নীচে পৌঁছবে না, ফলে হিমবাহের গলন রোধ পাবে। এই ধারণা দ্রুত আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কিন্তু এই প্রস্তাব তার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গী সরিয়ে রেখে এক সামাজিক বিতর্কে রূপান্তরিত হয়েছে। কোবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইন গবেষক আকিহো শিবাতা ব্যাখ্যা করেন, বিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রযুক্তিগত আলোচনা দ্রুত সাধারণ জনগণের সাথে জড়িত সামাজিক বিতর্কে পরিণত হয়েছে। অ্যান্টার্কটিকা কোনো একক দেশের অন্তর্গত নয়। দ্য অ্যান্টার্কটিক ট্রিটি নামক চুক্তির মধ্য দিয়ে এক ধরনের আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব মারফত অ্যান্টার্কটিকা একটা সংস্থা দ্বারা পরিচালিত হয়। অ্যান্টার্কটিকার শাসনব্যবস্থা রাজনৈতিক প্রভাব, কর্তৃত্ব, সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। নানা বাধাবিঘ্ন সত্ত্বেও, আন্টার্কটিক বিরোধগুলোর কূটনৈতিক সমাধান করার ঐতিহাসিক নজির রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। প্রস্তাবের বৈজ্ঞানিক দিকগুলো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হলেও, এর রাজনৈতিক দিকগুলো উপেক্ষিত। এতে ছয় দশকেরও বেশিসময় ধরে শান্তিপূর্ণ আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রকল্পের ওপর দ্বন্দ্বের ছায়া পড়তে পারে।
এই সামাজিক বিতর্ক ঘোরালো হয়ে ওঠার আগে শিবাতা এবং প্যাট্রিক ফ্লাম তা নিয়ে পেপার প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স জার্নালে তাঁদের প্রকাশিত পলিসি পেপারে, কোবে ইউনিভার্সিটির গবেষকরা তিনটে প্রধান থিমের ওপর ফলাফল তুলে ধরেছেন- কর্তৃত্ব, সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা। কর্তৃত্ব সংক্রান্ত উদ্বেগ হল, এই ধরনের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কার এবং এটার জন্য অ্যান্টার্কটিক অ্যাক্সেস পরিচালনাকারী সংস্থায় শক্তির ভারসাম্যের ক্ষেত্রে কী প্রভাব পড়বে। সার্বভৌমত্ব ঘটিত উদ্বেগ হল, কুমেরুর বিদ্যমান ও সুপ্ত অঞ্চলের উপর দাবির প্রভাবকে নিয়ে। আর নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে প্রশ্নটা উঠে আসে তা হল, পৃথিবীর পক্ষে এত গুরুত্বপূর্ণ এক পরিকাঠামোকে কীভাবে সুরক্ষা দেওয়া যাবে। শিবাতার মূল বক্তব্য হল তাঁদের পেপারটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আড়ালে লুকিয়ে থাকা রাজনৈতিক এবং আইনী ‘ছায়া’র উপর আলোকপাত করতে চেয়েছে। তাঁদের বিশ্বাস নেতিবাচক দিকগুলোকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বোঝার পরেই এই প্রযুক্তিগুলোর বিকাশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন।
কোবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিশেষজ্ঞ জানান, এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করাটা চূড়ান্ত সমাধান নয়। তিনি জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক বিজ্ঞানীরা এই সমাধান উপযুক্ত কিনা সেই দৃষ্টিকোণ থেকে এই জাতীয় প্রযুক্তিগুলোকে নানাভাবে পরীক্ষা করছেন। এই বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত আলোচনায় যদি দেখা যায় সামাজিক সুবিধা আইনগত সমস্যার চেয়ে বেশি, তাহলে তাঁদের মতো আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং আন্তর্জাতিক আইনবিদদের এই আলোচনায় অংশ গ্রহণ করা দরকার।