প্রায় হাজার বছর আগে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের জলবায়ুতে বড় ধরনের পরিবর্তন শুরু হয়। সাদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় ও ইউনিভার্সিটি অব ইস্ট অ্যাঙ্গলিয়ার নেতৃত্বে পরিচালিত একটি নতুন গবেষণা এমনটাই বলছে। গবেষকদের মতে, এই জলবায়ু পরিবর্তন মানুষকে আরও পূর্ব দিকে সরে গিয়ে নতুন দ্বীপে বসতি গড়তে উৎসাহিত করেছিল। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, পশ্চিম পলিনেশিয়ার বাসযোগ্য দ্বীপগুলো, যেমন- সামোয়া ও টোঙ্গা ধীরে ধীরে শুষ্ক হয়ে ওঠে। বিপরীতে, পূর্ব পলিনেশিয়ার দ্বীপ, যেমন- তাহিতিসহ ফরাসি পলিনেশিয়া ক্রমশ বেশি বৃষ্টিপ্রবণ হয়ে ওঠে। এগুলি কৃষি ও বসবাসের জন্য তুলনামূলকভাবে অনুকূল ছিল। কাজটি প্যাসিফিক রেইনফল ওভার মিলেনিয়াল টাইমস্কেলস প্রকল্পের অংশ। দীর্ঘ সময় ধরে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বৃষ্টিপাতের পরিবর্তন ও তার মানব অভিবাসনের প্রভাব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গবেষকেরা তাহিতি ও নুকু হিভা থেকে সংগৃহীত পলল নমুনায়, পাতার উপর জমে থাকা উদ্ভিজ্জ মোম বিশ্লেষণ করে অতীতের আর্দ্রতা ও শুষ্কতার তথ্য বার করেন। পরে এই তথ্য অন্য জলবায়ু রেকর্ড ও মডেলের সঙ্গে মেলানো হয়। এর ভিত্তিতে গত দেড় হাজার বছরে বৃষ্টিপাতের ধারা পুনর্গঠন করা হয়। গবেষণার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রশান্ত মহাসাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রার স্বাভাবিক পরিবর্তনের ফলে প্রায় ১১০০ থেকে ৪০০ বছর আগে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় কনভার্জেন্স জোন পূর্ব দিকে সরে যায়। ফলত, পশ্চিম অংশে বৃষ্টি কমে যায় আর পূর্ব অংশে বাড়ে। গবেষকদের মতে, পশ্চিমের দীর্ঘমেয়াদি শুষ্কতা মানুষকে সরে যেতে বাধ্য করে। আর পূর্বের বেশি বৃষ্টি ও মিষ্টি জলের প্রাচুর্য, নতুন দ্বীপে বসতি গড়ার টান সৃষ্টি করে। এই জলবায়ু পরিবর্তনই সম্ভবত কুক দ্বীপপুঞ্জ ও তাহিতির মতো এলাকায় মানুষের ধাপে ধাপে বসতি বিস্তারের পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেছিল। গবেষকদের মতে, ভবিষ্যৎ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বুঝতে অতীতের এই অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ দিশা দেখাতে পারে।
সূত্র :Ocean variability drives a millennial-scale shift in South Pacific hydroclimate. Communications Earth, 2025.
