মহারাষ্ট্রে, পশ্চিম ঘাট পর্বতমালার উত্তরদিকে, কৃষি সম্প্রসারণের ফলে ব্যাঙের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ইকোলজিক্যাল অ্যাপ্লিকেশান জার্নালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষা ব্যাখ্যা করেছে কীভাবে কৃষিকাজ এলাকার বিভিন্ন উভচর প্রাণীদের জীবনে বিপদ ডেকে আনছে। নেচার কনজারভেশন ফাউন্ডেশন এবং বোম্বে এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন গ্রুপের গবেষক বিজয়ন জিথিন এবং তার দলের নেতৃত্বে এই গবেষণা উদ্বেগের বিষয়গুলো তুলে ধরেছে। গবেষণা দল তিনটি ভিন্ন পরিবেশে ব্যাঙের জনসংখ্যার তুলনা করেছেন: প্রাকৃতিক মালভূমি, ধানক্ষেত এবং বর্ষাকালে আম বা কাজুর বাগান। তথ্য সংগ্রহের জন্য গবেষকরা নির্দিষ্ট পদ্ধতির সাহায্য নেন- বেল্ট ট্রানসেক্ট সার্ভে । চারটি মালভূমি জুড়ে ৫০টি অবস্থান জরিপ করে, তারা এই অঞ্চলে ব্যাঙের প্রজাতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য আবিষ্কার করেন । তারা দেখেন ধান ক্ষেতে ব্যাঙের বৈচিত্র্য সর্বনিম্ন, আবার বাগানগুলো সামগ্রিকভাবে সবচেয়ে কম সংখ্যক ব্যাঙের আবাসস্থল। এই পরিবর্তিত আবাসস্থল কিছু বিরল প্রজাতির ব্যাঙ যেমন মিনারভ্যারিয়া সেপফি এবং গোয়ান ফেজারভ্যারিয়াকে দুষ্প্রাপ্য করে তুলেছে আবার ধানের ক্ষেতে মিনারভ্যারিয়া সিহাড্রেনসিসের মতো কিছু সাধারণ ব্যাঙ পাওয়া গেছে। গবেষণাটি ব্যাঙেদের আবাসস্থলের ক্ষতির গুরুতর প্রভাবের কথা তুলে ধরেছে। যে সময় বৃষ্টি কম হয় সে সময় পাথুরে এলাকায় থাকা অণুজীব ব্যাঙের ডিম এবং ব্যাঙাচি রক্ষা করে কিন্তু বর্তমানে কৃষিকাজ তা প্রভাবিত করছে।
পশ্চিমঘাট জীববৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত। সেখানে প্রায় ২৫২টি উভচর প্রজাতি রয়েছে, যার মধ্যে ২২৬টি ব্যাঙ। দুর্ভাগ্যবশত, আবাসস্থল ধ্বংস, দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কাইট্রিডিওমাইকোসিসের মতো রোগের কারণে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০.৭% উভচর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। বিগত চার দশকে, এই চাপের কারণে বিভিন্ন প্রজাতির উভচরের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। কৃষিজমি এবং শহুরে অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণ গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থলকে ধ্বংস করছে। ফলে ব্যাঙের প্রজননের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। খামার থেকে প্রবাহিত জলে প্রায়শই ক্ষতিকারক কীটনাশক এবং সার থাকে, ফলে জলের গুণমানের আরও ক্ষতি হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সংবেদনশীল ব্যাঙের প্রজাতি। পরিবেশের ছোটো ছোটো পরিবর্তন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানুষের সৃষ্ট ব্যাঘাত তাদের সংখ্যা হ্রাসের ক্ষেত্রে দায়ী। গবেষকদের মতে কৃষি এলাকায় জীববৈচিত্র্য রক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মানুষকে সতর্ক করতে হবে। উভচররা আমাদের পরিবেশগত স্বাস্থ্যের মূল সূচক হিসাবে কাজ করে। ফলে প্রাণীকুলের সংরক্ষণের সাথে চাষের ভারসাম্য বজায় রাখে তবেই এগোতে হবে।