
পাখির গান বনভূমিকে মনোমুগ্ধকর সুরে ভরিয়ে তোলে। এই গানগুলো দিয়ে পাখিরা তাদের এলাকা চিহ্নিত করে, সঙ্গীকে আকৃষ্ট করে এবং দলের মধ্যে যোগাযোগ বজায় রাখে।এই গানগুলো এক রকম থাকে না, বরং সময়ের সঙ্গে বদলায় ,ঠিক যেমন মানুষের ভাষা বা সঙ্গীত পরিবর্তিত হয়।অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, পাখির চলাফেরা, বয়স এবং নতুন পাখির আগমন বা পুরনো পাখির চলে যাওয়ার কারণে তাদের গানে পরিবর্তন আসে। তারা ১ লাখেরও বেশি পাখির গান বিশ্লেষণ করে বুঝেছেন, এই বিষয়গুলো পাখির গানের বৈচিত্র্য তৈরি করে। গবেষকরা তিন বছর ধরে অক্সফোর্ডশায়ারের গ্রেট টিট (Parus major) পাখিদের ২০,০০০ ঘণ্টারও বেশি রেকর্ডিং সংগ্রহ করেছেন। এই পাখিদের ৭৭ বছর ধরে উইথাম গ্রেট টিট গবেষণার অংশ হিসেবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।গবেষকদের লক্ষ্য ছিল , কোন গান জনপ্রিয় হয়, কোনটি হারিয়ে যায়, এবং কীভাবে তাদের গানের ধরন সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় এই বিসয় গুলো বোঝা। গবেষকরা পাখিদের গানের পরিবর্তন বুঝতে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মডেল তৈরি করেছেন, যা গানের ভিত্তিতে আলাদা পাখিকে চিনতে পারে।এই প্রযুক্তির মাধ্যমে তাঁরা পাখিদের গানের পার্থক্য মাপতে ও পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। বয়স্ক পাখিরা পুরোনো গান ধরে রাখতে সাহায্য করে ।তরুণ পাখিরা নতুন গান শিখে পরিবর্তন আনে, কিন্তু বয়স্ক পাখিরা পুরোনো গান মনে রেখে সেগুলো টিকিয়ে রাখে। তবে শুধু বয়সের কারণে গান বদলায় না। গবেষকরা দেখেছেন, যখন পাখিরা বেশি মেশে বা অন্য জায়গা থেকে নতুন পাখি আসে, তখন তারা প্রচলিত গান বেশি শিখতে থাকে, ফলে গানের পরিবর্তন ধীরে ধীরে হয়। যে সমস্ত পাখিরা নিজের এলাকার কাছকাছি থাকে, তারা নিজেদের আলাদা গানের বৈশিষ্ট্য ধরে রাখে। যেসব জায়গায় পাখির চলাচল কম, সেখানে তাদের গানও বেশি বৈচিত্র্যময় হয়।নতুন পাখিরা সাধারণত ওই এলাকার প্রচলিত গানই শেখে। তারা নতুন গান খুব কম আনে, তবে বেশি গান শেখার ফলে গানের ধরণ আরও সমৃদ্ধ হয়।গবেষক ড. নিলো মেরিনো বলেন মানুষের ভাষা ও গান যেমন জায়গাভেদে ভিন্ন হয়, তেমনি কিছু পাখিরও নিজেদের আলাদা গান থাকে, যা সময়ের সাথে বদলায়।এই গবেষণা প্রমাণ করে পাখির সংখ্যা পরিবর্তন ও তাদের আসা-যাওয়া কীভাবে গান শেখার পদ্ধতিকে প্রভাবিত করে। এর ফলে গানের বৈচিত্র্য ও পরিবর্তনের গতি নির্ধারিত হয়।এটিই প্রথম গবেষণা, যেখানে বন্য প্রাণীদের মধ্যে সংখ্যা পরিবর্তনের ফলে তাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য কীভাবে গড়ে ওঠে, তা বিশদভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। পাখিদের গানের পরিবর্তনের বিশাল তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা বুঝতে পেরেছেন পাখিদের আচরণ কেমন এবং কীভাবে জনসংখ্যার পরিবর্তন প্রাণীদের সংস্কৃতিতে প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে, যখন পাখির সংখ্যা কমে বা বাড়ে, তখন তাদের গানের ধরণও বদলায়। এই তথ্য ভবিষ্যতে পাখি সংরক্ষণের কাজে লাগতে পারে।গবেষণার সব তথ্য এখন সবার জন্য উন্মুক্ত, যাতে অন্য গবেষকরাও এ নিয়ে আরও জানতে পারেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বেন শেলডন, জানান এই গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, একটি পাখির পুরো জীবন পর্যবেক্ষণ করলে , প্রকৃতিতে সবকিছু কীভাবে একে অপরের সাথে যুক্ত তা বোঝা যায়। প্রাণীদের ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণারত বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি (এআই)
ও দীর্ঘদিনের গবেষণা ব্যবহার করে এখন বুঝতে পারছেন, বিভিন্ন প্রাণী কীভাবে নিজেদের বিশেষ ধারা তৈরি করে ও ধরে রাখে।ভবিষ্যতে আরও গবেষণা করে দেখা যেতে পারে, অন্য গান গাওয়া পাখিরাও একইভাবে গান বদলায় কিনা। এই গবেষণার ফলে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন ওঠে। যেমন আবহাওয়া পরিবর্তন ও বন ধ্বংস হলে, পাখির সংখ্যা ও চলাফেরা কীভাবে বদলায়? এছাড়াও এর ফলে তাদের গান কীভাবে পরিবর্তিত হতে পারে ও পাখির গান শেখা ও পরিবর্তন কেন গুরুত্বপূর্ণ?গবেষকরা আরও ভালোভাবে গবেষণা করলে বুঝতে পারবেন পাখিরা কীভাবে গান শেখে ও পরিবর্তন করে, ও এটি কীভাবে তাদের সমাজ, সংস্কৃতি ও পরিবেশের পরিবর্তনের সাথে যুক্ত।এই গবেষণা শুধু পাখির ভাষা বুঝতে সাহায্যই করে না, উপরন্তু পৃথিবীর প্রাuণীরা কীভাবে বদলায়, সেটাও জানতে সাহায্য করে।এই গবেষণাটি ‘কারেন্ট বায়োলজি ‘ নামক বিজ্ঞান জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
পাখিদের ও যে মানুষ এর মতো এই রকম গান এর ভেদা ভেদ আছে এই লিখা থাকে জানতে পারলাম। এই রকম আরো কিছু অজানা সম্পর্কে জানতে চাই। আশা করি নতুন কিছু অজনা বিষয়ে পরবর্তী লিখে তে পাওয়া যাবে।