
অনেকেই ভাবেন, পাখিদের খাওয়ানো নিছকই এক শখ। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এই অভ্যাসই একেকটা ভাইরাস-যুদ্ধে পাখিদের জীবনাস্ত্র হতে পারে। আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব আরকানসাস-এর গবেষকদল দেখিয়েছেন, মানুষের দেওয়া খাবারই নির্ধারণ করে, পাখিরা রোগে পড়লে বাঁচবে, নাকি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে। গবেষণার কেন্দ্রে ছিল মাইকোপ্লাজমা গ্যালিসেপটিকা নামের এক ব্যাকটেরিয়া, যা সাধারণত পাখিদের চোখে প্রদাহের সৃষ্টি করে। পরীক্ষায় ক্যানারি পাখিদের দুই দলে ভাগ করা হয়। এক দল পায় উচ্চ প্রোটিন-ভিত্তিক খাবার (মূলত ডিমের সাদা অংশ), আরেক দল পায় ফ্যাট-যুক্ত খাদ্য (ডিমের কুসুম ও তেল)। এরপর তাদের একাংশকে মাইকোপ্লাজমা গ্যালিসেপটিকা দিয়ে সংক্রমিত করা হয়, আরেকাংশকে দেওয়া হয় প্লেসিবো, অর্থাৎ নিরীহ পদার্থ। দেখা যায়, যারা প্রোটিন খেয়েছিল, তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা আগেভাগেই তৈরি ছিল। প্রতিরোধ-সম্পর্কিত ২৬৭টি জিন, সংক্রমণের আগেই সক্রিয় হয়ে যায়। আর ফ্যাট-খাওয়া পাখিদের শরীর যেন ঘুমোচ্ছিল। মাইকোপ্লাজমা গ্যালিসেপটিকা ঢোকার পর প্রোটিন খাওয়া পাখিদের চোখে কম প্রদাহ এবং দ্রুত আরোগ্য লক্ষ করা যায়। অন্যদিকে ফ্যাট-খাওয়া পাখিদের শরীর কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রের রূপ নেয়- প্রতিরোধ গড়তে হাজারের ওপর জিন হঠাৎ বদলে যেতে থাকে। তাছাড়া আর এন এ পর্যায়ক্রম থেকে জানা যায়, প্রোটিন খাওয়া পাখিদের শরীরে সংক্রমণের আগেই সাত গুণ বেশি ‘জে চেইন’ নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরোধক জিন সক্রিয় ছিল। একই সময়ে ফ্যাট-পাখিদের শরীরে মাইটোকন্ড্রিয়া আর ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ বা রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখার জিনে, চাপ পড়ছিল। যেন একরকম ‘প্রাণ রাসায়নিক ত্রাস’ চলছিল। ‘প্রাণ রাসায়নিক ত্রাস’ হল এক শারীরবৈজ্ঞানিক বা রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া, যেখানে শরীর বা মস্তিষ্ক হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে উদ্দীপিত বা ত্রস্ত প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করে। এমনকি ‘লেপ্টিন রিসেপ্টর’ হিসেবে পরিচিত, শরীরের শক্তির ভারসাম্য রক্ষাকারী জিনটিও দুই দলে দুই রকম সাড়া দেয়। স্পষ্ট বোঝা যায়, খাবার শুধু শরীর নয়, জিনগত যুদ্ধের কৌশলও বদলে ফেলে। বন্য ফিঞ্চ পাখিদের মধ্যেও দেখা গেছে মাইকোপ্লাজমা গ্যালিসেপটিকা ভাইরাসের বিরুদ্ধে সহনশীলতা এসেছে খাদ্য-ভিত্তিক অভিযোজন থেকেই। অর্থাৎ মানুষ যদি বাড়ির উঠোনেই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন, ছোট কীট, চিনাবাদাম, সূর্যমুখী বীজ দেয়, তাহলে সেই স্নেহচ্ছায়ায় পাখিদের রোগপ্রতিরোধও বাড়বে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য পাত্রে শুধু ভুট্টার কুচি, বাজরা কিংবা পাউরুটি দিলে চলবে না। এগুলি পেট ভরালেও, রোগ ঠেকায় না। শীতে বা পরিযানের সময় পাখিদের চর্বিও দরকার পড়ে, তাই সেই জায়গায় ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে। তাই পরের বার যখন পাত্রে খাবার দেবেন, মনে রাখবেন, আপনার হাতেই হয়তো পাখির ভবিষ্যৎ।