
চীনে একটি নতুন জীবাশ্মের আবিষ্কার থেকে জানা গেছে প্রায় ১৬ কোটি বছর আগে শেষ জুরাসিক যুগেও পাখি ছিল। এটি পাখির বিবর্তন সম্পর্কে আমাদের ধারণাকে বদলে দেয়। এই গবেষণা অনুযায়ী পাখি এবং ডাইনোসর উভয়েই পাশাপাশি বিবর্তিত হয়েছে, সরাসরি ডাইনোসর থেকে পাখির বিবর্তন হয়নি।
সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা পূর্ব চিনের ফুজিয়ান প্রদেশে প্রাচীনতম পাখির জীবাশ্ম খুঁজে পেয়েছেন, যার নাম বামিনোর্নিস ঝেংহেনসিস। এই সংরক্ষিত জীবাশ্মের শ্রোনী,শুঁড়, অগ্র ও পশ্চাৎ অঙ্গের কিছু অংশ অক্ষত অবস্থায় আছে ।নেচার জার্নালে এই আবিষ্কারের বিবরণ দেওয়া হয়েছে। বামিনোর্নিস আদিম পাখির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জীবাশ্ম। ১৮৬০-এর দশকে আর্কিওপ্টেরিক্স আবিষ্কারের পর থেকে এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পাখির জীবাশ্মগুলির মধ্যে এটি একটি। এই জীবাশ্ম আবিষ্কার পাখির উৎপত্তি সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের নতুন তথ্য দিচ্ছে । এটি প্রমাণ করে জুরাসিক যুগে আর্কিওপ্টেরিক্সই একমাত্র পাখি ছিল না । চীন জীবাশ্ম আবিষ্কারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।প্রতিটি বয়সের আকারের এবং রূপের ডাইনোসর এবং প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী এখানে পাওয়া গেছে।
ডাইনোসর এবং পাখির মধ্যে একটি অনুপস্থিত যোগসূত্র হিসেবে বিবেচিত আর্কিওপ্টেরিক্স প্রথম জার্মানিতে আবিষ্কৃত হয়েছিল। তবে চীনে ডাইনোসর যুগের অন্যান্য পাখির মতো প্রাণী, যেমন ক্রিটেশিয়াস করমোরেন্ট এবং গ্লাইডিং মাইক্রোআপ্টর, আবিষ্কৃত হয়েছে।
গবেষণা থেকে প্রমাণিত হয় যে নতুন আবিষ্কৃত পাখিটির একটি ছোট লেজ ছিল।জীবাশ্মবিদ ওয়াং মিন বলেছেন পূর্বে, প্রাচীনতম ছোট লেজযুক্ত পাখির জীবাশ্মগুলি প্রাথমিক ক্রিটেসিয়াস যুগের ছিল।নতুন আবিষ্কৃত পাখির জীবাশ্ম বামিনোর্নিস এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে প্রাচীন ছোট লেজযুক্ত পাখি । অর্থাৎ, পাখিরা বিজ্ঞানীদের আগেকার ধারণার চেয়ে অনেক আগেই, প্রায় ২ কোটি বছর আগে থেকেই ছিল। ছোটো লেজের সাহায্যে নিজের ভরকে সুবিধামতো স্থানান্তরিত করে এরা সামনের দিকে বায়ুচলাচলের সুযোগ তৈরি করে নিত।
ব্যামিনোর্নিসের জীবাশ্মে পাখি এবং ডাইনোসর উভয়ের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর শ্রোনী এবং বক্ষবন্ধনী(pectoral girdles)অনেকটা পাখির মতোই, কিন্তু হাতগুলি স্পষ্টতই ডাইনোসরের আকৃতির।
বামিনোর্নিস পাখি হওয়া সত্ত্বেও, একই সময়ের অন্যান্য পাখিসদৃশ প্রাণীর তুলনায় খুব আলাদা ছিল। এ থেকে অনুমান করা হয়,
বামিনোর্নিসের আবির্ভাবের আগেই অনেক বিবর্তনীয় বৈচিত্র্য ঘটেছিল। পাখির বংশ সম্ভবত লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বিবর্তিত হয়ে বিভিন্ন ধরণের রূপ পেয়েছে।
অর্থাৎ পাখিরা ডাইনোসর থেকে বিবর্তিত হয়েছে এবং এই প্রক্রিয়াটি লক্ষ লক্ষ বছর আগে থেকেই ঘটছিল।