
একটি গবেষণাদল সমগ্র পাখি-প্রজাতির একটি বিস্তৃত বিবর্তনীয় বৃক্ষ বা ‘ফাইলোজেনিক ট্রি’ তৈরি করছেন। শত শত গবেষণালব্ধ তথ্যকে বাস্তব জীবনের তথ্যের সাথে একত্রিত করা হচ্ছে। ‘ওপেন ট্রি অফ লাইফ’ নামক এই প্রকল্পটি নতুন জিনোম সংক্রান্ত অন্তর্দৃষ্টির সাথে ক্রমাগত সংযোজিত হতে থাকবে। কর্নেল ল্যাব অফ অরনিথোলজির অধ্যাপক এমিলি জেন ম্যাকটাভিশ এবং তাঁর দল প্রতিটি পরিচিত পাখির বিবর্তন সম্পর্কিত তথ্য নকশায়িত করছেন। এই বিস্তৃত ফাইলোজেনিক ট্রি তৈরির জন্য গবেষকরা ১৯৯০ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রকাশিত প্রায় ৩০০ টি বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে ৯,২৩৯ টি পাখি প্রজাতির তথ্য চিত্রিত করেছেন। শুধু তাই নয়, আরো হাজারটি প্রজাতির উপরে আলোকপাত করা তথ্যকে এর মধ্যেই অন্তর্ভুক্ত করছেন। এই তথ্য ভান্ডারটি যাতে নতুন গবেষণা ও পাখি সংক্রান্ত বিষয়ে আগ্রহী মানুষদের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় এবং ক্রমাগত যাতে নতুন তথ্য সংযোজিত হতে পারে সেই ভাবেই প্রকল্পটি নকশায়িত করা হয়েছে। “মানুষ পাখি ভালোবাসে, অনেকেই পাখি নিয়ে কাজ করে। অনেকেই পাখির বিবর্তন সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। আমরা সমস্ত তথ্য সংশ্লেষিত করে এক জায়গায় জড়ো করছি”, ম্যাক্লাভিশ বলেন। ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্সেস -এর পত্রিকাতে এই গবেষণাপত্রের পদ্ধতি এবং ফলাফলগুলির বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। এই বিবর্তন বৃক্ষ তৈরি করার আরও একটি সুবিধা হল, এটি কেবলমাত্র পাখির বিবর্তন নয়, অন্যান্য প্রাণী ও উদ্ভিদ গোষ্ঠীকে অধ্যয়নেরও কাজে লাগতে পারে। চার বছর আগে শুরু হওয়া এই প্রকল্পে ব্যবহৃত সফটওয়্যারটি তৈরি করতে প্রায় এক দশক সময় লেগেছিলো। কর্নেল ল্যাবের তৎকালীন কর্মচারী এলিয়ট মিলার এ বিষয়ে সাহায্য করেছিলেন। “প্রতিবছর কয়েক ডজন পাখির ফাইলোজেনি বা বিবর্তনীয় ইতিহাস প্রকাশিত হয়। তবুও তাদের ফলাফল, শ্রেণীবিন্যাস থেকে শুরু করে তাদের পূর্বজদের চরিত্র সম্পর্কে আমাদের ধ্যান ধারণা, সব কিছুর উপরেই তথ্য থাকলেও, তা ব্যাপক হারে ব্যবহার করার তেমন সুযোগ ছিল না। আমাদের প্রকল্পটি এই শূন্যস্থান পূরণ করবে এবং ফলাফলগুলি পরবর্তী গবেষণার জন্য আরও ভালোভাবে কাজে লাগানো যাবে”। পাখিদের প্রতি এলিয়টের আগ্রহ এবং পাখি বিশেষজ্ঞ দ্বারা ল্যাবটি পরিপূর্ণ থাকার ফলে তারা ‘মারলিন’ এবং ‘ই বার্ড’ এর মতন অ্যাপ তৈরি করছিলেন। অন্যদিকে সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিবর্তনীয় বৃক্ষ একত্রিত করার জন্য এই সফটওয়্যারটিকে কাজে লাগানো গেছে। ‘ওপেন ট্রি ‘একটি সহযোগী প্রকল্প যা বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী এবং শ্রেণীবিন্যাস বিশেষজ্ঞদের সঠিক এবং ব্যাপক বিবর্তনীয় বৃক্ষ তৈরি করতে সাহায্য করবে। পৃথিবীর প্রতিটি নামযুক্ত প্রজাতি একে অপরের সাথে কিভাবে সম্পর্কিত সেক্ষেত্রেও এই মডেল সহায়ক হবে। উইকিপিডিয়ার মতনই এই মডেলটি ব্যবহারকারীদের বিবর্তনীয় বৃক্ষ সম্পর্কে নিজে থেকে তথ্য আপলোড করার সুযোগ দেবে। ফলে যে কোনো প্রজাতির বিবর্তন সম্পর্কিত সব থেকে সাম্প্রতিক তথ্যগুলি প্রতিফলিত হবে। ‘ওপেন ট্রি অফ লাইফ’-এ এখন ২৫ লক্ষেরও বেশি প্রজাতির তথ্য রয়েছে। জিনোম ক্রমের অগ্রগতির জন্য ক্রমাগত নতুন তথ্য এর সাথে যুক্ত হচ্ছে। শত শত প্রকাশিত গবেষণার তথ্য সংগ্রহ এবং বিভিন্ন শাখা ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে সেগুলিকে মানুষের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য, প্রকল্পটি একটি মার্গ দর্শন হিসেবে কাজ করছে।