পান্তাভাতের গবেষণা আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে

পান্তাভাতের গবেষণা আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ এপ্রিল, ২০২২

পান্তা ভাত -গ্রাম বাংলার পরিচিত খাদ্য। পূর্ব দিন রাত্রে ভাতের মধ্যে জল ঢেলে পরদিন সেই জল দেওয়া ঠান্ডা ভাত খাওয়া হয়। এটিই সাধারণত পান্তা ভাত নামে খাদ্য তালিকায় চিহ্নিত। এই পান্তা ভাতের উপকারিতা নিয়ে গবেষণা করেছেন আসাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মধুমিতা বড়ুয়া ও তাঁর দল। এই গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল পান্তা ভাতে কী কী উপাদস্ন আছে ও সে উপাদান শরীরের জন্যে কতটা উপকারী বা অপকারী তা খুঁজে বের করা। গবেষণা লব্ধ ফলাফল এশিয়ান জার্নাল অফ কেমিস্ট্রি তে প্রকাশিত হয়েছে। পান্তাভাত নিয়ে সম্ভবত এটিই একমাত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণা।
ভাতে জল মেশালে কী ঘটে?
আগের দিন রাত থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত প্রায় দশ বারো ঘন্টা ভাতে স্বচ্ছ জল মিশিয়ে রাখার ফলে জল ও ভাতের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া হয়। এসময় জলের নিচে থাকা ভাত বাতাস বা অক্সিজেনের সংস্পর্শে আসতে পারে না। এর ফলে ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। এবং যে পাত্রে ভাত ও জল মিশিয়ে রাখা আছে সে পাত্রের ভেতরে এনারোবিক ফারমেন্টেশনের ঘটনা ঘটে। এই প্রক্রিয়ায় ভাতের মধ্যে থাকা কার্বহাইড্রেড ভেঙে যায়। এছাড়াও ভাতের মধ্যে ফাইটেটের মতো যেসব অ্যান্টি -নিউট্রিশানাল ফ্যাক্টর থাকে সেগুলোরও ক্ষয় হয়। ভাত হাইড্রেড হয়ে থাকে।
কী থাকে পান্তাভাতে?
দেখা গেছে পান্তায় নানারকম মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা পুষ্টিকর খনিজ পদার্থ রয়েছে। যেমন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, জিংক, ফসফরাস, ভিটামিন বি ইত্যাদি। প্রধান গবেষক মধুমিতা বড়ুয়া বলেছেন, তারা দেখেছেন, সাধারণ ভাতের তুলনায় পান্তা ভাতে এসব পুষ্টিদায়ক পদার্থের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। ১০০ মিলিগ্রাম সাধারণ ভাতে আয়রণের পরিমাণ থাকে ৩.৫ মিলিগ্রাম। কিন্তু ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখা পান্তায় এই পরিমাণ হয় ৭৩.৯ মিলিগ্রাম। এভাবে ক্যালসিয়ামের পরিমানও সাধারণ ভাতের তুলনায় পান্তা ভাতে অনেক গুন বেড়ে যায়। পাশাপাশি পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক এর উপস্থিতিও অনেক বেড়ে যায় পান্তাভাতে।
সাধারণ ভাতে ফাইটেটের মতো যে অ্যান্টি -নিউট্রিশনাল ফ্যাক্টর আছে সেটা আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিংকের মতো পুষ্টিকর পদার্থকে বেঁধে রাখে। ফলে ভাত খেলে মানুষের শরীর এসব পদার্থ গ্রহন করতে পারে না। কিন্তু ফারমেন্টেশনের কারণে পান্তায় ফাইটেট দুর্বল হয়ে পড়ায় পুষ্টিকর পদার্থগুলো উন্মুক্ত হয়ে পড়লে আমাদের শরীর সেগুলো গ্রহন করতে পারে।
মুখ্য উপকারিতা:
পান্তায় থাকা পুষ্টিকর পদার্থগুলি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। পান্তায় পাওয়া অতিরিক্ত আয়রন দেহে রক্তের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। পান্তার অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম দেহের হাড়কে শক্তিশালি করে, এবং ম্যাগনেশিয়াম শরীরে নিসৃত এনজাইমকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে। এছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে পান্তায় থাকে প্রচুর পরিমানে বিটা-সিটোস্টেরল, কেম্পেস্টেরোলের মতো মেটাবলাইটস যা শরীরকে বিভিন্ন প্রদাহ বা যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে। পাশাপাশি পান্তায় থাকা আইসোরহ্যামনেটিন -সেভেন- গ্লুকোসাইড ফ্ল্যাভোনয়েডের মতো মেটাবলাইটস যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। মধুমিতা আরো জানান, দই এর মধ্যে থাকা ল্যাকটিক অ্যাসিড পাওয়া যায় পান্তায়।
তবে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় পান্তার কোনো অপকারী দিক পাওয়া যায় নি। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্যে পান্তা অপকারী কিনা তা নিয়ে কাজ চলছে এখনো। উল্লেখ্য ড. বড়ুয়া জানিয়েছেন, গবেষণার কাজ এখনো চলমান। শেষ হয়নি সম্পূর্ন।