পিঁপড়ের অতিসংবেদী ঘ্রাণশক্তি

পিঁপড়ের অতিসংবেদী ঘ্রাণশক্তি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২০ অক্টোবর, ২০২৫

বিজ্ঞানীরা অবশেষে উদ্ঘাটন করেছেন পিঁপড়েদের অবিশ্বাস্য ঘ্রাণশক্তির রহস্য। এ এক বিশেষ জিনগত কৌশল যা তাদের চারপাশের পৃথিবীকে গন্ধের মাধ্যমে নিখুঁতভাবে বুঝতে সাহায্য করে। তাঁরা জানিয়েছেন, পিঁপড়েরা তাদের সমাজ গঠন ও পরিচালনার জন্য মূলত গন্ধের ওপর নির্ভর করে। এরা গন্ধের মাধ্যমে কথা বলে, দল গঠন করে, খাবার খুঁজে পায় ও বিপদের খবর দেয়। সবকিছুই ঘটে ফেরোমোন নামক রাসায়নিক সংকেতের মাধ্যমে।
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো—পিঁপড়ের একটি স্নায়ু কোষ বা নিউরন মাত্র একটি নির্দিষ্ট গন্ধ চিনতে পারে। যদি এই কোষ একাধিক গন্ধ শনাক্ত করত, তবে গন্ধের বার্তা গুলিয়ে যেত। এই একক ঘ্রাণ নিয়ন্ত্রণই তাদের সামাজিক যোগাযোগকে নিখুঁত করে তোলে।
রকিফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী ড্যানিয়েল ক্রোনাওয়ার ও তাঁর দল “ক্লোনাল রেইডার পিঁপড়ে” প্রজাতি নিয়ে গবেষণা করেছেন। এই প্রজাতির পিঁপড়েরা যৌন প্রজননের বদলে নিজেদের ক্লোন বা অনুলিপি তৈরি করে বংশবিস্তার করে এবং দলবদ্ধভাবে অন্য পোকামাকড়ের বাসায় হানা দিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করে। বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন পিঁপড়েদের এই অসাধারণ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া।প্রতিটি নিউরন শত শত গন্ধ রিসেপ্টর জিনের মধ্যে থেকে কেবল একটিকেই সক্রিয় রাখে আর বাকিদের চুপ করিয়ে দেয়।
বিজ্ঞানীরা আর এন এ সিকোয়েন্সিং ও ফ্লুরোসেন্স হাইব্রিডাইজেশনের মতো আধুনিক আলোক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখতে পান—যখন কোনো রিসেপ্টর জিন চালু হয়, তখন তার আশপাশের জিনগুলোর দিকে আর এন এ পলিমারেজ নামক উৎসেচক ছড়িয়ে পড়ে সেগুলোকে কার্যহীন করে দেয়। একই সঙ্গে বিপরীত দিকে আরেকটি প্রক্রিয়া চলে, যা আগের জিনগুলোকে থামিয়ে রাখে। ফলে সক্রিয় জিনটির চারপাশে তৈরি হয় একধরনের “জিন সুরক্ষা বলয়”, যা শুধু একটি গন্ধকেই শনাক্ত করতে দেয়।
এই নতুন পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে “ট্রান্সক্রিপশানাল ইন্টারফেরেন্স”।কোনো ডিএনএ অঞ্চলে যদি দুটি জিন একেবারে গায়ে গায়ে থাকে, তবে একটির ট্রান্সক্রিপশন প্রক্রিয়া অন্যটির পথ আটকাতে পারে। ফলে দ্বিতীয় জিনটি সঠিকভাবে প্রকাশিত হতে পারে না। এ এমন এক কৌশল যা পিঁপড়েদের প্রতিটি নিউরনকে একেবারে নির্দিষ্ট গন্ধের জন্য সুসংবদ্ধ করে দেয়।
আরও আশ্চর্যের বিষয়, একই ব্যবস্থা পাওয়া গেছে ভারতীয় জাম্পিং অ্যান্ট ও মৌমাছির মধ্যেও। সম্ভবত ফলমাছি ব্যতিক্রম। অর্থাৎ, সামাজিক পোকামাকড়দের মধ্যে এই প্রক্রিয়া বহুল ব্যবহৃত , যা তাদের গন্ধ-ভিত্তিক সমাজব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখে।
গবেষকরা মনে করেন, এই জিনগত কৌশলই পিঁপড়েদের ঘ্রাণশক্তিকে দ্রুত বিকশিত হতে সাহায্য করেছে। নতুন গন্ধ শনাক্ত করার ক্ষমতা যোগ হলেও পুরোনো ভারসাম্য কিন্তু নষ্ট হয় না। এভাবেই তারা গড়ে তোলে পৃথিবীর সবচেয়ে সুসমন্বিত সমাজগুলোর একটি।

সূত্রঃ “Transcriptional interference gates monogenic odorant receptor expression in ants” by Giacomo L. Glotzer, P. Daniel H. Pastor and Daniel J.C. Kronauer, (19.09.2025), Current Biology.
DOI: 10.1016/j.cub.2025.09.026

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

20 − 18 =