পিঁপড়ের ঝাঁকের মতো মাইক্রোরোবট

সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় কিছু বিজ্ঞানীরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চৌম্বকীয় রোবটের একটি ঝাঁক তৈরি করেছেন যারা পিঁপড়ের মতো একসাথে দল বেঁধে কাজ করে আর তাদের থেকে আকারে বহুগুণ বড়ো বস্তু সহজে তুলে ফেলে। সেল প্রেস জার্নাল- ডিভাইস-এ সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন এই মাইক্রোরোবটের ঝাঁক একটি ঘূর্ণায়মান চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে কাজ করে। তাদের ধারণা এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র রোবট চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে এমন কঠিন কাজ করতে সক্ষম যা একা একা একটি রোবট করতে হিমশিম খেয়ে যায়। দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলের হ্যানয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব ও ন্যানো ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের জিয়ং জে উই এবং তার সহকর্মীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই মাইক্রোরোবট কতটা ভালোভাবে কাজ করে। তারা দেখেন একটি একক মাইক্রোরোবটের দেহের দৈর্ঘ্যের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি উচ্চতায় রোবটগুলো আরোহণ করতে পারে এবং বাধা অতিক্রম করতে পারে। খুব কাছাকাছি রাখা ১০০০ টি মাইক্রোরোবটের একটি বড়ো ঝাঁক খুব সহজেই একটা ভেলা তৈরি করে তরলের ওপর ভাসতে পারে, আবার একটি ওষুধের বড়িকে চারপাশ থেকে মুড়ে ফেলে তাকে তরলের মাধ্যমে অন্যত্র নিয়েও যেতে পারে। এই ওষুধের বড়ি এক একটি রোবটের ওজনের প্রায় ২০০০ গুণ বেশি। এই মাইক্রোরোবটের কাছে কোন কাজই অসাধ্য নয়, তা সে প্রতি রোবটের চেয়ে ৩৫০ গুণ ভারী বস্তু বয়ে নিয়ে যাওয়াই হোক বা কোনো আটকে যাওয়া রক্তনালী খুলে দেওয়া। এরা কাজ করে দলবেঁধে, ঠিক পিঁপড়ের মতো। দলবদ্ধভাবে কাজ করার জন্য তারা ব্যর্থতার বিরুদ্ধে আরও বেশি প্রতিরোধী হয়ে ওঠে। যদি কখনও দলের কোনো সদস্য লক্ষ্য পূরণ করতে না পারে তবে বাকিরা তাদের পূর্বনির্ধারিত কাজ সম্পাদন করতে থাকে যতক্ষণ না তারা সফল হয়। প্রতিটি মাইক্রোরোবট প্রায় ৬০০ মাইক্রোমিটার লম্বা এবং এতে ফেরোম্যাগনেটিক নিওডাইমিয়াম-আয়রন-বোরন (NdFeB) কণাগুলো প্রথিত থাকে, যা রোবটকে চৌম্বক ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া দেখাতে সাহায্য করে এবং অন্যান্য মাইক্রোরোবটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম করে। দুটি সংযুক্ত ঘুরন্ত চুম্বকের থেকে উত্পন্ন চৌম্বক ক্ষেত্র রোবটগুলোকে স্ব-একত্রিত হওয়ার শক্তি দেয়। গবেষকরা রোবটগুলোকে বিভিন্ন কোণে এমনভাবে প্রোগ্রাম করেছিলেন, যাতে রোবটগুলো চুম্বকের প্রভাবে বিভিন্ন কনফিগারেশনে একত্রিত হতে পারে। গবেষকদের মতে এইধরনের মাইক্রোরোবটের ঝাঁকের জন্য বাইরে থেকে চৌম্বকীয় নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয় এবং তারা বাস্তব ক্ষেত্রে ধমনীর মতো জটিল বা সীমাবদ্ধ স্থানে নিজে থেকে যেতে পারেনা। তাই তাদের আশা ভবিষ্যত গবেষণা মাইক্রোরোবটদের নিজে থেকে কাজ করার ক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করবে।