
রকেফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক বলছেন, পিঁপড়েদের শরীরের মাপ তাদের সামাজিক খেলায় অন্যতম উপাদান। কোন পিঁপড়ে রানী হবার যোগ্যতা রাখবে তা অনেকটাই তার বড় আকারের উপর নির্ভর করে। অন্যদিকে পিঁপড়ে যত আকারে ছোট ততই সে এগিয়ে চলে খাটুনি, ত্যাগ, আর প্রজননহীনতার দিকে। তবে জিন এই খেলার আড়ালে বসে ছক কষে- রানী হবার যোগ্যতাসম্পন্ন শরীরের মাপ কখন পাল্টাবে।
বুঝতে হবে, কেবল বিশাল শ্রমিক হলেই সে রানী নয়। রানী মানে তার ডানা গজাবে, চোখ জটিল হবে, বিশাল ডিম্বাশয় গড়ে তোলার ক্ষমতা তৈরি হবে। আর শ্রমিক? সে কেবল জীবন্ত যন্ত্র মাত্র। অথচ উভয়ের জিনোম একই। কিন্তু বিকাশজনিত নমনীয়তা যে বিপ্লব ঘটায় তা তাক লাগানোর মতন। একই জিন অথচ আলাদা ভবিষ্যৎ। বহু প্রাণী যেমন ফলমাছি, শরীরের মাপ না পাল্টেও কিছু বৈশিষ্ট্য বদলায়। কিন্তু পিঁপড়ের বেলায় ব্যাপারটা সরাসরি ঘটে।
প্যাট্রিক পিয়েকার্সকি বলছেন, “আমরা দেখতে চেয়েছিলাম আকারকে বাদ দিয়ে চোখ বা ডিম্বাশয় আলাদা করে গঠিত হয় কি না।”এ প্রশ্নের উত্তর পেতে তারা বেছে নেন এক আজব পিঁপড়ে প্রজাতি- ক্লোনাল রেইডার অ্যান্ট। এই পিঁপড়েরা যৌন প্রজনন করে না। এর মধ্যে কিছু মধ্য শ্রেণিও থাকে। তারা না পুরো রানী, না পুরো শ্রমিক। একটা রহস্যময় মধ্যবর্তী রূপ। যাদের চোখ তৈরি হতে থাকে, ডিম্বাশয় ফুলে ওঠে, এমনকি ডানার ছাপও পড়ে সুযোগ বা সময় বিশেষে। গবেষণার প্রথম ধাপে, জিনকে এক রেখে পরিবেশ বদলানো হয়। খাবার কমানো হয়, তাপমাত্রা বাড়ানো হয়, অন্যরকম শ্রমিক দিয়ে যত্ন করানো হয়। কিন্তু ফলাফল একই। সব পরিবেশেই তারা শরীরের মাপ বদলায়। আর সেই মাপই বলে দেয়, সে রানী হবে না শ্রমিক! কিন্তু যদি কোনো লার্ভা একটা নির্দিষ্ট আকারে পৌঁছে যায়, তাহলে তার শরীর হঠাৎ রানীর মতো গঠন নিতে শুরু করে। শরীরের ভেতরে রানী হওয়ার একটা সুইচ থাকে, আর নির্দিষ্ট মাপে পৌঁছলেই সেই সুইচ চালু হয়ে যায়। এরপর গবেষকরা প্রশ্নটা উল্টে দেন। “যদি জিন আলাদা হয়, কিন্তু পরিবেশ এক থাকে?” উঠে আসে এক অদ্ভুত সত্য। ‘M’ নামের এক জিনগত ধারা ছোট হলেও, রানী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রাখে। মানে, জিন শুধু মাপ নয়, মাপের মানও বদলে দেয়। পিয়েকার্সকি বলেন, “কিছু জিন মাপের সীমা কমিয়ে দেয়। ছোট হয়েও রানী হওয়া যায়। অন্য জিনে সেই সুইচ টানতে হলে বিশাল মাপের হতে হয়। অর্থাৎ আসল নিয়ন্ত্রণ লুকিয়ে রয়েছে জিনের ভিতরেই। ড্যানিয়েল ক্রোনাওয়ার জানাচ্ছেন,এটা শুধু কিছু পিঁপড়েকে মাপা নয়, পুরো পোকামাকড় সমাজের গঠন বোঝা। পিঁপড়ে বসতিকে তারা ভাবে একেকটা অসাধারণ প্রাণী সমাজ। যেখানে হাজারটা প্রাণী মিলে একটা সম্মিলিত সত্তা গড়ে তোলে। এই গবেষণা আমাদের জানায়, একটা রানী আর এক শ্রমিক শুধু পেশায় নয়, মস্তিষ্ক, আচরণ, এমনকি আত্মপরিচয়ে আলাদা।
সূত্র : Proceedings of the National Academy of Sciences (July, 2025)