পিনোচ্চিও গিরগিটির আসল পরিচয় 

পিনোচ্চিও গিরগিটির আসল পরিচয় 

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৩০ নভেম্বর, ২০২৫

মাদাগাস্কার দ্বীপটি পৃথিবীর গিরগিটি-বৈচিত্র্যের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। বিশ্বের মোট গিরগিটি প্রজাতির প্রায় ৪০ শতাংশই এই দ্বীপের বাসিন্দা। এমন সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্যের মাঝেই দেড়শো বছর ধরে গবেষকদের বিভ্রান্ত করে আসছিল এক বিশেষ গিরগিটি, যাকে দীর্ঘদিন ধরে “পিনোচ্চিও গিরগিটি” নামে ডাকা হতো। আধুনিক জিন প্রযুক্তি অবশেষে জানাল এটি আসলে সম্পূর্ণ আলাদা এক প্রজাতি, যার পরিচয় এতদিন আড়ালেই ছিল।

গবেষণায় দেখা গেছে, নাকের দীর্ঘ, সরু ও রঙিন সংযোজিত উপাঙ্গের কারণে যেসব গিরগিটিকে একই দলের অংশ মনে করা হতো, তারা আসলে জিনগতভাবে পৃথক প্রজাতিতে বিভক্ত। পিনোচ্চিও গিরগিটি ছাড়াও বিজ্ঞানীরা আরেকটি নতুন প্রজাতি শনাক্ত করেছেন । এর মধ্যে বিজ্ঞানীদের প্রথম সাফল্য হলো—পিনোচ্চিও গিরগিটিকে আলাদা প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত করা । এর আনুষ্ঠানিক নামকরণ হয়েছে ক্যালুমা পিনোচ্চিও । এতদিন শুধুমাত্র নাকের গঠন দেখে একে ক্যালুমা গ্যালাস প্রজাতির অংশ বলা হয়েছিল, কিন্তু জিনগত তথ্য সেই ধারণাকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে।

আরও অদ্ভুত ব্যাপার, গবেষকরা অতীতে সংগৃহীত নমুনা বিশ্লেষণ করে আরেকটি সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন, নাম ক্যালুমা হোফ্রেইটেরি । বহু বছর ধরে এই প্রাণীগুলোকেও সেই একই নাকের গঠনের সাদৃশ্য থাকার কারনে ভুল করে ক্যালুমা নাসুটাম ভেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু ডিএনএ বিশ্লেষণ নিশ্চিত করেছে যে এদের পৃথক বিবর্তনীয় ইতিহাস রয়েছে। এই নতুন প্রজাতির নাম রাখা হয়েছে জিনতাত্ত্বিক অধ্যাপক মাইকেল হোফরাইটারের নামে, যিনি গবেষণায় ব্যবহৃত ডিএনএ পুনরুদ্ধার প্রযুক্তির বিকাশে বড় ভূমিকা পালন করেছেন।

গবেষকেরা জানাচ্ছেন, নাকের দীর্ঘ প্রসারিত কাঠামো বয়স, রং, দৈর্ঘ্য ও আকৃতির দিক থেকে অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তিত হতে পারে। এই বিবর্তন সম্ভবত স্ত্রী গিরগিটির সঙ্গী নির্বাচনের পছন্দের সঙ্গে যুক্ত। ফলে এই বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করে প্রজাতি চিহ্নিত করা পূর্ববর্তী গবেষণায় ভুল সিদ্ধান্ত তৈরি করেছিল।

এই গবেষণার আরেকটি বিশেষ দিক হলো মিউজিওমিকস পদ্ধতির ব্যবহার—যার মাধ্যমে ১৮৩৬ সালের মতো প্রাচীন নমুনা থেকেও ডিএনএ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত ঐতিহাসিক নমুনাগুলো আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে নতুন বিবর্তনীয় তথ্য দিচ্ছে, যা প্রজাতি শনাক্তকরণে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করেছে।

 

বর্তমানে, এই দুটি নতুন প্রজাতি যুক্ত হওয়ায় মাদাগাস্কারের পরিচিত গিরগিটির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ঠিক ১০০টি, আর বিশ্বব্যাপী মোট প্রজাতি এখন ২৩৬টি। এই গবেষণা শুধু দীর্ঘদিনের বিভ্রান্তি দূর করেনি, — গিরগিটির বিবর্তন, বৈচিত্র্য ও সংরক্ষণবিজ্ঞানেও এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি এনে দিয়েছে।

 

সূত্র: “Towards a revision of the Malagasy chameleons of the Calumma gallus complex: Redefinition of Calumma nasutum based on a museomics approach and descriptions of two new species” by Frank Glaw, Stefanie Agne, et.al; 23rd October 2025, Salamandra.

DOI:10.5281/zenodo.17482578

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

11 + sixteen =