২০০৪ সালে সিরিয়ার আলেপ্পোর কাছে উম এল-মারা নামক জায়গায় ৪৪০০ বছরের পুরোনো একটি সমাধিস্তম্ভর মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল কাদামাটির কয়েকটি ছোটো ছোটো নল বা চোঙ। মানুষের আঙুলের সাইজের সেইসব নলের গায়ে খোদাই করা ছিল আটটি সুস্পষ্ট প্রতীকচিহ্ন। নলগুলো ১ সেন্টিমিটার পুরু, ৪.৭ সেন্টিমিটার লম্বা। লম্বালম্বিভাবে তাদের মধ্য দিয়ে একটা করে ছ্যাঁদা করা আছে। কাল নির্ণয় করবার রেডিও-কার্বন পদ্ধতি প্রয়োগ করে জানা গেছে ওগুলি খ্রিস্টপূর্ব ২৪০০-এর। এর আগে অক্ষর-খোদাইয়ের সবচেয়ে পুরোনো যেসব নমুনা পাওয়া গিয়েছিল তার থেকে এগুলি অন্তত পাঁচশো বছর পুরোনো। সেটাই চমকে দিয়েছে প্রত্নতত্ত্ববিদদের। এতদিন জানা ছিল মিশরে প্রাপ্ত খ্রিস্টপূর্ব ১৯০০-এর একটি লিপিই সবচেয়ে পুরোনো অক্ষর-লিপি। তার আগে অবশ্য ছিল চিত্রপ্রতীক। কিন্তু সে তো বর্ণমালা নয়; মিশরের অক্ষর-লিপিই ওইসব প্রতীকচিত্রকে বর্ণমালায় রূপ দিয়েছিল। কিন্তু এখন জানা যাচ্ছে সিরিয়ার এই অক্ষর-লিপি আরও পুরোনো। অনেকে বলছেন এগুলিই হয়তো মানুষের তৈরি অক্ষরচিহ্নর প্রাচীনতম নিদর্শন।
মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোর জন্স হপ্কিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক গ্লেন শোয়ার্ট্জ-এর মতে ওই প্রতীকচিহ্নগুলির ধ্বনি ইংরেজি a, i, k, l, n, s and y অক্ষরগুলির ধ্বনির সঙ্গে মেলে। কিন্তু এই লিপিচিহ্নগুলির সঙ্গে কোনো পরিচিত ভাষার কোনো মিল নেই। শোয়ার্ট্জ এইসব চিহ্নর অর্থ উদ্ধার করবার জন্য হিব্রু, আরামিক ও আরবি ভাষার প্রাচীন ও আধুনিক লিপিচিহ্নর সঙ্গে তুলনা করে দেখেছেন। এগুলি হয়তো মানুষের নাম কিংবা হয়তো ওই সমাধিস্তম্ভর মধ্যে যেসব জিনিস আছে তাদের নাম।
মিশরী চিত্রলিপির সঙ্গে এদের সাদৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে, উম এল-মারা-র সঙ্গে প্রাচীন মিশরের যোগাযোগ ছিল। এখনই অবশ্য সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ভবিষ্যৎ গবেষণা এ প্রশ্নের উত্তর দেবে, প্রতীকচিহ্নগুলির অর্থ উদ্ধার করবে আর সেই সঙ্গে পৃথিবীতে কোথায় কবে বর্ণমালার উদ্ভব হয়েছিল সে রহস্যও জানা যাবে।
সূত্র: doi: https://doi.org/10.1038/d41586-024-03876-3