আবহাওয়া, মানুষের কার্যকলাপ, আবাসস্থলের ক্ষতি এরকম নানা কারণে আজ বহু প্রাণী বিপন্ন। কিন্তু প্রকৃতি সেই প্রাণীদের বাঁচাতে নানা ধরনের প্রচেষ্টা চালায়। ইতালির অ্যাকোয়ারিয়ামে এক ধরনের বিপন্ন প্রজাতির স্ত্রী হাঙর, পুরুষ হাঙর ছাড়াই সন্তান উত্পাদন করছে। এই সন্তান উৎপাদনে পুরুষ হাঙরের কোনও ভূমিকা নেই। ইতালির কালা গনোন অ্যাকোয়ারিয়ামের এই স্ত্রী হাঙরদুটো গত ১৪ বছর পুরুষদের থেকে দূরে কাটিয়েছে। গবেষণা জানাচ্ছে এই ঘটনা জীবের অত্যাবশ্যক বেঁচে থাকার প্রাকৃতিক ব্যবস্থা হতে পারে। সায়েন্টিফিক রিপোর্টস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এই দুটো কমন স্মুথ হাউন্ড হাঙরের (মুস্টেলাস মুস্টেলাস) মধ্যে বারবার অযৌন প্রজনন নথিভুক্ত করেছেন। ইন্টারন্যাশানাল ইউনিয়ন ফর কনজেরভেশন অফ নেচার এই হাঙরকে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। হাঙরগুলি সাধারণত ভূমধ্যসাগর এবং অন্যান্য উষ্ণ জলে পাওয়া যায় তবে অবৈধ মাছ ধরার কারণে বর্তমানে ঝুঁকির সম্মুখীন।
২০২০ সাল থেকে দেখা গেছে উভয় স্ত্রী হাঙরই অযৌনভাবে সন্তান উৎপাদন করেছে, যা ফ্যাকাল্টেটিভ পার্থেনোজেনেসিসের উদাহরণ। পার্থেনোজেনেসিস হল নিষিক্তকরণ ছাড়াই নতুন প্রাণীর জন্ম হয়ে বংশবৃদ্ধি হওয়া। গাছের মধ্যে এটা বেশ সাধারণ ঘটনা। মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে অস্বাভাবিক হলেও, এই ঘটনা সরীসৃপ যেমন কুমির, জলের সাপ, উভচর আর কিছু মাছের মধ্যে দেখা যায়। ফ্যাকাল্টেটিভ পার্থেনোজেনেসিস এই হাঙর প্রজাতির মধ্যে প্রথম নথিভুক্ত করা গেল। তাহলে এই হাঙর যৌন এবং অযৌন উভয়ভাবেই সন্তান পুনরুত্পাদন করতে পারে। গবেষকরা দেখেছেন যে এই স্ত্রী হাঙর দুটো মোটামুটি বছরে একবার পার্থেনোজেনেটিকভাবে সন্তান উত্পাদন করতে পারে। আর স্ত্রী হাঙরদুটো পর্যায়ক্রমে সন্তানের জন্ম দেয়। গবেষকদের মতে এতে শুক্রাণু সঞ্চিত হয়ে যৌন প্রজননের সম্ভাবনা বাতিল হয়ে যায়।
স্ত্রী হাঙরগুলোর চারটে সন্তান হলেও মাত্র একটাই বেঁচে আছে। বাচ্চাটার গায়ে দাঁতের দাগ থেকে বোঝা যায়, তাকে আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছিল। আর এই কারণেই অন্য বাচ্চাগুলোর মৃত্যু হয়েছিল। বাচ্চা হাঙরের জিনগত উৎপত্তি জানতে বিজ্ঞানীরা এদের সাথে, প্রাপ্তবয়স্ক হাঙরের ডিএনএ মিলিয়ে দেখেছেন। দেখা গেছে উভয় জিন সাদৃশ্যপূর্ণ। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে পুরুষের সংখ্যা হ্রাস পেলে তা বন্য প্রাণীকে পার্থেনোজেনেসিসের দিকে চালিত করতে পারে। যা বেঁচে থাকার প্রাকৃতিক ক্ষমতা। হাঙরের জনন সম্পর্কে যেমন গবেষণা জানাচ্ছে, তেমন বিপন্ন প্রজাতির জন্য সংরক্ষণের প্রচেষ্টার দিক নির্দেশ করছে।