পৃথিবীতে জল এলো কোথা থেকে

পৃথিবীতে জল এলো কোথা থেকে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২ জানুয়ারী, ২০২২

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সবসময়ই বলেন যে মহাকাশ থেকে আমাদের পৃথিবীকে দেখতে লাগে অপরূপ সুন্দর। আর তার মূল কারণ হল পৃথিবীর মধ্যে থাকা এই সমস্ত ওয়াটার বডি অর্থাৎ সাহর, মহাসাগর এবং আরও অনেক কিছু। আসলে মহাকাশ থেকে পৃথিবীর উপর এই সমস্ত ওয়াটার বডি বোঝা যায় নীলচে রঙের আভায়। সেটাই দেখতে লাগে অপূর্ব। ইতিমধ্যেই মহাকাশ থেকে নভশ্চরদের তোলা পৃথিবীর অসংখ্য ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। সেইসব মনোমুগ্ধকর ছবি দেখতে গিয়ে একটাই প্রশ্ন বারবার ঘুরেফিরে এসেছে। পৃথিবীতে এই জল এসেছে কোথা থেকে?
এছাড়াও অনেকেই ভাবেন যে চিরকালই কি পৃথিবী এরকমই দেখতে ছিল? নাকি এখানে ছিল অন্য চিত্র? বলা হয় পৃথিবীর ৭০ শতাংশ জলে পরিপূর্ণ। কিন্তু কোথা থেকে কীভাবে জল এল? এইসব প্রশ্নের উত্তর বহুদিন ধরেই খুঁজে চলেছেন বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি একদল ব্রিটিশ বৈজ্ঞানিকের দল বহু পুরনো একটি থিয়োরিই প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে পৃথিবীর মধ্যে থাকা জল ধরিত্রীর বাইরে থেকেই এসেছে। সেই সঙ্গে তাঁরা এও মনে করেছেন যে স্পেস বা মহাকাশ থেকেই পৃথিবীর জলের উৎস হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা এই ধারণাকে সমর্থন জানিয়েছেন যে, ধূমকেতু এবং বরফ গ্রহাণুগুলি সংঘর্ষের ফলে পৃথিবীতে আছড়ে পড়ার ফলেই পৃথিবীপৃষ্ঠে জলের উৎপত্তি হয়েছে। অর্থাৎ জলের উৎস হয়েছে বা সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। ওই ব্রিটিশ বিজ্ঞানীদের দল ২৫১৪৩ Itokawa গ্রহাণু থেকে পাওয়া উপাদানের পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। আর তারপরেই তাঁরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে পৃথিবীর জল এসেছে বাইরে থেকে। ওই বিজ্ঞানীদের দল যে গ্রহাণু নিয়ে পর্যবেক্ষণ করেছেন সেটি আবিষ্কার হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। আর এটিই প্রথম গ্রহাণু যেখান থেকে ২০০৫ সালে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পৃথিবীতে আনা হয়েছিল। জাপানি মহাকাশযান ‘হায়াবুসা স্পেসক্র্যাফট’ দু’বার ওই গ্রহাণুতে অবতরণ করেছিল।
সামান্য পরিমাণ ধুলো অর্থাৎ ধূলিকণা ওই গ্রহাণু থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। জাপানের এই স্পেসক্র্যাফট ২০১০ সালে ওই নমুনা পৃথিবীতে পাঠিয়েছিল।
নেচার জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা সংক্রান্ত প্রতিবেদন অনুসারে বৈজ্ঞানিকরা ওই গ্রহাণুর মধ্যে কিছুটা পরিমাণ জল খুঁজে পেয়েছিলেন। আর এর ফলেই অনুমান করা হয়েছিল যে অন্যান্য গ্রহেও বরফ আকারে জলের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। এই গবেষণা থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তেও এসেছিলেন যে পৃথিবীপৃষ্ঠে থাকা জল সোলার উইন্ড বা সৌর বায়ুর কারণেও আসতে পারে। ওই ব্রিটিশ বৈজ্ঞানিকদের কথায় সৌর বায়ুতে থাকা পার্টিকেলগুলি অবশ্যই মেঘের মধ্যে থাকা অক্সিজেন অনুর সংস্পর্ষে এসেছিল। আর তারপরই সেটা জল রূপে পৃথিবীতে বর্ষিত হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × 4 =