পৃথিবীতে মিষ্টি জলের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে ৪০০কোটি বছর আগে

পৃথিবীতে মিষ্টি জলের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে ৪০০কোটি বছর আগে

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৩ অক্টোবর, ২০২৪

গবেষকরা মনে করেন যে প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি বছর আগে পৃথিবী সম্ভবত সম্পূর্ণভাবে মহাসাগর দ্বারা আচ্ছাদিত ছিল। কিন্তু পৃথিবীর প্রাচীনতম শিলার মধ্যে অন্যতম পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার জ্যাক হিলস থেকে ৪০০ কোটি বছরের পুরনো জারকন স্ফটিকের মধ্যে অক্সিজেন অণু বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন যে প্রায় ৪০০ কোটি বছর আগে পৃথিবীতে শুষ্ক ভূমি এবং মিষ্টি জল ছিল। স্ফটিকের মধ্যে থাকা রাসায়নিক সূত্র প্রকাশ করেছে গরম, গলিত শিলা থেকে এই স্ফটিক গঠনের সময় সেগুলো মিষ্টি জলের সংস্পর্শে এসেছিল। আবুধাবির খলিফা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-রসায়নবিদ হামেদ গামালেল্ডিয়েন এবং সহকর্মীরা নেচার জিওসায়েন্সে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করেছেন। গবেষকদের মতে জারকনে অক্সিজেনের সবচেয়ে ভারী এবং হালকা গঠন বা আইসোটোপের আপেক্ষিক অনুপাত শুধুমাত্র তখনই সম্ভব যদি সেখানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মিষ্টি জল উপস্থিত থাকে। আমরা জানি সূর্যের তাপে পৃথিবীর জলভাগ থেকে জল বাষ্পীভূত হয়ে ওপরের দিকে ওঠে, ঠাণ্ডা হয়ে ঘনীভূত হয়, তারপর বৃষ্টি আকারে ঝরে পড়ে। এই অনুসন্ধান থেকে জানা যায় যে মিষ্টি জল পূর্বের ধারণার চেয়ে কয়েক মিলিয়ন বছর আগে থেকেই সক্রিয়ভাবে পৃথিবীতে জল চক্রের অন্তর্গত ছিল। অতীতের গবেষণা থেকে প্রমাণ পাওয়া গেছে যে এই জলচক্র, অন্তত ৩.২ বিলিয়ন বছর আগে উপস্থিত ছিল।
গ্যামালেল্ডিয়েন বলেছেন যদিও ৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে মিষ্টি জলের উপস্থিতি ছিল, তবে তার মানে এই নয় যে পৃথিবীতে সেই সময় জীবের অস্তিত্ব ছিল। তবে জীবের অস্তিত্বের জন্য যে মূল উপাদান প্রয়োজন তা অবশ্যই ছিল। বর্তমানে, অস্ট্রেলিয়ার স্ট্রেলি পুল চার্টে জীবাশ্ম অবস্থায় অণুজীবের আস্তরণ পাওয়া গেছে। এই আস্তরণ যাকে স্ট্রোমাটোলাইট বলে পৃথিবীতের জীবনের প্রথম অস্তিত্বের প্রমাণ। এই স্ট্রোমাটোলাইট ৩.৫ বিলিয়ন বছর আগের। বাষ্পীভবন এবং বৃষ্টির চক্র জলের অণুর রাসায়নিক গঠন পরিবর্তন করে। যখন সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে জল বাষ্পীভূত হয়, তখন সমুদ্রের জলে লবণ পড়ে থাকে। অক্সিজেনের আইসোটোপ, অক্সিজেন -১৬, অন্য একটি আইসোটোপ অক্সিজেন-১৮ এর চেয়ে দ্রুত বাষ্পীভূত হতে থাকে। সেই বাষ্পীভূত জল ঠাণ্ডা হয়ে বৃষ্টি হয়ে স্থল্ভাগে পড়ে এবং আবার বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে মিশে যায়। সময়ের সাথে সাথে, মূল সমুদ্রের জলের তুলনায় মিষ্টি জলে অক্সিজেন -১৬-র ঘনত্ব বৃদ্ধি পায়। যখন সেই বৃষ্টির জল মাটিতে প্রবেশ করে তখন এটি রাসায়নিকভাবে শিলার সাথে বা শিলার মধ্যে থাকা ম্যাগমার সাথে বিক্রিয়া করতে পারে, আর এই জলে অক্সিজেনের হালকা আইসোটোপ উপস্থিত ছিল- যা মিষ্টি জলের উপস্থিতি সুনিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে। তবে গবেষকরা মনে করেন পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার পরের ঘটনা অনুমান বা অধ্যয়ন করা খুব কঠিন কারণ সে বিষয়ে তথ্য কম। এই ধরনের প্রাচীন স্ফটিক বিজ্ঞানীদের একমাত্র সূত্র সুতরাং এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।