পৃথিবীমুখী ধূমকেতু

পৃথিবীমুখী ধূমকেতু

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৭ এপ্রিল, ২০২২

সৌরমণ্ডলের . বাইরে থেকে পৃথিবীর কাছাকাছি আসতে চলেছে একটি ধূমকেতু। আমাদের সৌরমণ্ডলে অনেকদিন আগেই প্রবেশ করেছে এই ধূমকেতু যার নাম C/2021 O3 । সৌরজগতের অন্তর্বর্তী গ্রহগুলির দিকে এগোচ্ছে এই ধূমকেতু। আগামী মাসে অর্থাৎ মে মাসের শেষের দিকে আকাশে দেখা দেবে এই ধূমকেতুটি। সচরাচর ধূমকেতুর দেখা পাওয়াই যায় না। অনেকদিন কাউকে দেখতে না পেলে অনেকে তাই মশকরা করে ধূমকেতুর সঙ্গে তুলনা টানেন। আর সাধারণ মানুষ হ্যালির ধূমকেতুর নামের সঙ্গেই পরিচিত, কারণ একবার দেখা গেলে এই ধূমকেতুর দর্শন পাওয়া যায় অনেক বছর পরে। সেই জন্যই বিখ্যাত এই ধূমকেতু। এবার জানা গিয়েছে, যে ধূমকেতুটি পৃথিবীর কাছাকাছি আসছে তা বাইরের দুনিয়া থেকে আমাদের সৌরমণ্ডলে প্রবেশের করার আগে কয়েক লক্ষ বছর পার করেছে এই ধূমকেতু।
গত বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের জুলাই মাসে আবিষ্কার হয়েছিল এই ধূমকেতু। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন আপাতত এই ধূমকেতু পৃথিবী থেকে দেখলে বোঝা যাচ্ছে সূর্যের পিছনে রয়েছে। আমাদের সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে দূরবর্তী স্থান Oort Cloud থেকে ক্রমশ সামনের দিকে এগোচ্ছে এই ধূমকেতু। সৌরমণ্ডলের চারপাশে যে অংশ আছে সেটা জুড়ে এই Oort Cloud একটি গোলাকার শেল বা আবরণ হিসেবে রয়েছে বলে মনে করা হয়। আকার আয়তনে এই Oort Cloud যথেষ্টই বড়। একটি পুরু আস্তরণের বাবল হল Oort Cloud। মূলত স্পেস ডেব্রিসের বরফের মতো টুকরো দিয়ে তৈর। কখনও কখনও এর আয়তন একটি পাহাড়ের সমান। কখনও বা তার থেকেও বড়। অর্থাৎ এই Oort Cloud সৌরমণ্ডলকে চারপাশ থেকে একটি গোলকের আকারে ঘিরে রেখেছে। আদতে এটি একটি বিশালাকাল বুদবুদ। সেখান থেকেই বেরিয়ে এই ধূমকেতু ঢুকে পড়েছিল আমাদের সৌরমণ্ডলে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের অনুমান সূর্যের কাছাকাছি এলে এই ধূমকেতু C/2021 O3 বাষ্পীভূত হয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত তাপের কারণে এটা হতে পারে। তবে যদি এই ধূমকেতু টিকে যায় তাহলেই বিষয়টি উত্তেজনাপূর্ণ হবে। PanSTARRS নামের একটি স্পেস টেলিস্কোপে প্রথম ধরা পড়েছিল এই ধূমকেতু তাই এর নাম PanSTARRS কমেট। আর্থ স্কাইয়ের মতে ৮ মে এই ধূমকেতু পৃথিবীর কাছাকাছি আসবে। ওই দিন পৃথিবী থেকে ধূমকেতুটির দূরত্ব থাকবে ৮ কোটি ২০ লক্ষ কিলোমিটার। আর চলতি মাসে ২১ এপ্রিল সূর্যের সবচেয়ে কাছে যাবে এই ধূমকেতু। বাইনোকুলারের সাহায্যে তা দেখাও যাবে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে গত বছর জুলাই মাসে যখন এই ধূমকেতু আবিষ্কার হয়েছিল তখন তা ধরা পড়েছিল Panoramic Survey Telescope And Rapid Response System বা Pan-STARRS টেলিস্কোপে। সেই সময় সূর্যের থেকে ধূমকেতুটির দূরত্ব ছিল ৪৮ মিলিয়ন কিলোমিটার। বৃহস্পতির কক্ষপথেরও বাইরে ছিল এর অবস্থা। সবচেয়ে অস্পষ্ট দৃশ্যমান নক্ষত্রের থেকেও চার লক্ষ গুণ ম্লান ছিল ধূমকেতুটি।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর পাশ দিয়ে এই ধূমকেতু যাওয়ার সময় হয়তো খালি চোখে দেখা যাবে না। বাইনোকুলারের সাহায্যে দেখা যেতে পারে। তবে ধূমকেতুর উজ্জ্বলতা নিয়ে কোনও অনুমান করা সম্ভব নয়। তাই সূর্যের সঙ্গে এই ধূমকেতুর সাক্ষাৎ কেমন হবে তার উপরেই নির্চর করে এই ধূমকেতুর ঔজ্জ্বল্য। শুধু তাই নয় বিজ্ঞানীদের কথায়, সূর্যের কাছাকাছি পৌঁছনোর পর জোরালো অভিকর্ষ বলের সম্মুখীন হবে এই ধূমকেতু। যদি কোনওভাবে সেটা কাটিয়েও উঠতে পারে তাও এটি কক্ষপথ ধরে সৌরমণ্ডল থেকে বেরিয়ে যাবে। আর কখনও ফিরবে না। হয়তো ভাসমান অবস্থায় থেকে যাবে আকাশগঙ্গা ছায়াপথে।