পৃথিবীর নিরুদ্দিষ্ট খনিজের রহস্যে ইতি পড়ল

পৃথিবীর নিরুদ্দিষ্ট খনিজের রহস্যে ইতি পড়ল

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা‌
Posted on ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

অনেকগুলো আলাদা আলাদা স্তর নিয়ে আমাদের এই পৃথিবী গঠিত। ক্রাস্ট, উপরের ম্যান্টেল, নীচের ম্যান্টেল এবং কোর বা কেন্দ্রক। এই সব স্তর ভেদ করে ভেতরে উঁকিঝুঁকি মেরে দেখার কাজটা খুব সহজ নয় মোটেই। আবার পৃথিবীর প্রস্থচ্ছেদ করে পরীক্ষাগারের টেবিলের উপরে রাখা – সেটাও কষ্টকল্পনা।
ব্রিজম্যানাইট, ফেরোপেরিক্লেস আর ডাভেমাওইট – পৃথিবীর বিভিন্ন স্তরে এই তিন মূল খনিজের উপস্থিতি সম্পর্কে আগে থেকেই ওয়াকিবহাল বিজ্ঞানীরা। কিন্তু আর একটা থাকতে পারে। তাত্ত্বিকভাবে ভূবিজ্ঞানীরা আন্দাজ করেন, উচ্চ তাপমাত্রায় ব্রিজম্যানাইট আর ডাভেমাওইট নিজেদের মধ্যে বিক্রিয়া করে অন্য একটা খনিজের জন্ম দিতে পারে। একই ধরণের স্ফটিক গঠন সত্ত্বেও কেন ঐ দুই খনিজ সংযুক্ত হয় না সেটা বিজ্ঞানীদের কাছে একটা জবরদস্ত ধাঁধা, এমনই বলছেন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির ভূবিজ্ঞানী ড্যান শিম।
প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই মহার্ঘ এক গবেষণা করা হয়েছে সম্প্রতি। বিশেষ প্রকোষ্ঠে উচ্চচাপে সে এক জব্বর তাপের পরীক্ষা। পৃথিবীর নীচের ম্যান্টেল স্তরের পরিস্থিতি কৃত্রিমভাবেই তৈরি করা হয়েছিল। উষ্ণতা ছিল ১৬৫০ থেকে ১৯২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে। তারপর এক সেকেন্ডের কম সময়ে সেটা পৌঁছে যায় ২৮০০ ডিগ্রিতে। ম্যান্টেল স্তরের একেবারে উপরদিক থেকে নীচে অবধি যে পদার্থ থাকে, সেই সব নমুনাকে প্রচণ্ড গরম অবস্থায় নানা পর্যবেক্ষণ চালিয়েছেন গবেষকরা। তারপর এক্সরের সাহায্যে খুঁটিয়ে দেখা হয় খনিজের অভ্যন্তরীণ গঠন আর আণবিক ক্রিয়াকলাপ। বেশ অপ্রত্যাশিতভাবেই, তাপমাত্রা যখন ২০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁইছুঁই, তখনই ব্রিজম্যানাইট আর ডাভেমাওইটের সংযোগে নতুন এক খনিজ পেরোভস্কাইটের জন্ম হয়। এই পেরোভস্কাইটই ছিল গবেষকদের অভীষ্ট। ওটাই পৃথিবীর অভ্যন্তরের নিরুদ্দিষ্ট খনিজ।
নেচার পত্রিকায় গবেষণাপত্রটা প্রকাশিত হল।