পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট

পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১ অক্টোবর, ২০২৪
পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট

মাউন্ট এভারেস্ট। পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। সার্ভে অব ইন্ডিয়া সূত্রে খবর, ১৮৫৫ সালে তারাই প্রথম এভারেস্টের মাপজোক শুরু করে। দেখা যায় এর উচ্চতা প্রায় ৮ হাজার ৮৪৮ মিটার অর্থাৎ ২৯ হাজার ২৯ ফুট। সেই হিসেবই চলে এসেছে গত দেড়শো বছরেরও বেশি সময় ধরে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা দেখার চেষ্টা করছেন কেন হিমালয় পর্বতমালার অন্যান্য চূড়ার তুলনায় মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা এত বেশি? গবেষকদের মতে এটি অন্যান্য পর্বতশৃঙ্গের তুলনায় একটু বেশিই লম্বা। হিমালয়ে, বেশিরভাগ পর্বতশৃঙ্গের মধ্যে উচ্চতার পার্থক্য প্রায় ১৬৪ থেকে ৩২৮ ফুটের মধ্যে। অর্থাৎ প্রায় ৫০ থেকে ১০০ মিটার। হিমালয় পর্বতমালায় অন্যান্য উঁচু চূড়ার মধ্যে রয়েছে ধৌলাগিরি (৮১৭২ মি.), মাকালু (৮৪৮১ মি.), এবং কাঞ্চনজঙ্ঘা (৮৫৮৬ মি.)। এভারেস্টের পরে যে সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তার নাম K2 যার উচ্চতা ৮৬১১ মিটার। বিজ্ঞানীদের মতে হিমালয়ের এক নদী মাউন্ট এভারেস্টের চূড়াকে ১৬৪ ফুট বা ৫০ মিটার বেশি উপরে ঠেলে দিয়েছে। নতুন এই সমীক্ষা অনুসারে, প্রায় ৮৯,০০০ বছর আগে এভারেস্ট থেকে প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে একটি নদীতে অন্য নদীর জলরাশি এসে মেশে। এই ঘটনার কারণে একটি বিশাল গিরিখাত তৈরি হয়, যার ফলে ভূমির ক্ষয় হয় এবং পাহাড়ের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। জিপিএস তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে যে এভারেস্ট প্রতি বছর প্রায় ০.০৮ ইঞ্চি বা ২ মিলিমিটার হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা পর্বতশ্রেণীর ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত বৃদ্ধির হারের চেয়ে বেশি। মূল কারণ খোঁজ করার সময় গবেষকরা দেখেন কারণ লুকিয়ে আছে আশপাশের নদীর মধ্যে।
নেপালের অরুণ নদী ইংরেজির ‘এল’ অক্ষরের আকারে প্রবাহিত হয়। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের আর্থ সায়েন্সেস বিভাগের গবেষক অ্যাডাম স্মিথ নদীর গতিপথকে গাছের কাণ্ড ও তার শাখাপ্রশাখার সঙ্গে তুলনা করেছেন। অরুণ নদী তার গতিপথের শুরুতে পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়, তারপর ৯০ ডিগ্রি বাঁক নিয়ে হিমালয়ের মধ্য দিয়ে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়। এটি ইঙ্গিত দেয় যে সম্ভবত নদীটি সম্প্রতি তার রূপ পরিবর্তন করেছে এবং সম্ভবত অন্য একটি নদীতে মিশেছে। আজ, অরুণ নদী কুশী নদীর একটি প্রধান উপনদী। হিমালয়ের মূল অংশ দিয়ে এই নদী একটি গভীর, সরু গিরিখাত কেটেছে, যা প্রসারিত হয়েছে ৩৫-কিলোমিটার এবং এর গভীরতা প্রায় ৭  কিলোমিটার। কিন্তু যখন এই নদীটি বহু বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল, তখন এত গভীর গিরিখাত তৈরি করতে এটিকে ভূমিধস বা হিমবাহের সাহায্য নিতে হয়নি। এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বিপুল জলরাশি এর সমস্ত শক্তির জোগান দিয়েছে। গবেষকরা মডেলের সাহায্যে দেখেন প্রায় ৮৯,০০০ বছর আগে, অরুণ উপনদী তার মূল, কুশী নদী থেকে আরও বেশি জল ধারণ করতে শুরু করে যার ফলে ওই গিরিখাতের সৃষ্টি হয়। কুশী নদী, চিন, নেপাল এবং ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে — সময়ের সাথে সাথে তার গতিপথের পরিবর্তন ঘটেছে। পৃথিবীর ভূত্বক থেকে বড়ো বড়ো পাথরের টুকরো অপসারণের ফলে, পর্বত চূড়া সহ আশেপাশের অঞ্চলের অবিচ্ছিন্ন অংশগুলোর পৃষ্ঠের উত্থান ঘটে। মাউন্ট এভারেস্টের উচ্চতা অন্যান্য পর্বত শৃঙ্গের থেকে বৃদ্ধি পায়। এমন কথাই প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 + eighteen =