পৃথিবী ঘিরে এক অদৃশ্য বৈদ্যুতিক বলয় আবিষ্কার

পৃথিবী ঘিরে এক অদৃশ্য বৈদ্যুতিক বলয় আবিষ্কার

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

আমাদের পৃথিবীকে আবৃত করে এক অদৃশ্য, দুর্বল শক্তি ক্ষেত্র শনাক্ত করা গেছে। এই বৈদ্যুতিক শক্তি ক্ষেত্র সম্পর্কে ৬০ বছর আগে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছিলেন। এখন তা পরিমাপও করা গেছে। এই বৈদ্যুতিক শক্তিক্ষেত্রকে অ্যাম্বিপোলার ফিল্ড বলা হয়। এর আবিষ্কার আমাদের চির-পরিবর্তনশীল বিশ্বের আচরণ ও এর বিবর্তন বুঝতে সুবিধা করবে। নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্লিন কলিনসন বলেছেন, বায়ুমন্ডল রয়েছে এমন যে কোনও গ্রহের অ্যাম্বিপোলার ক্ষেত্র থাকবে। তিনি জানিয়েছেন, অবশেষে এই শক্তি ক্ষেত্র পরিমাপ করা গেছে, তাই সময়ের সাথে সাথে এটা আমাদের গ্রহের পাশাপাশি অন্যদের কীভাবে আকার দেয় তা জানা যাবে। পৃথিবী মহাশূন্যে শুধুমাত্র জড় বস্তুর মতো অবস্থান করেনা, একে ঘিরে নানা শক্তি ক্ষেত্রে আছে। মাধ্যাকর্ষণ ক্ষেত্র, যার অভাবে আমাদের গ্রহ থাকবে না। মাধ্যাকর্ষণ বায়ুমণ্ডলকে পৃথিবীপৃষ্ঠে ধরে রাখতে সাহায্য করে। এরপর আসে চৌম্বক ক্ষেত্র, যা পৃথিবীর অভ্যন্তরে ঘূর্ণায়মান, পরিবাহী উপাদান দ্বারা উত্পন্ন হয়। এটা গতিশক্তিকে চৌম্বক ক্ষেত্রে রূপান্তরিত করে যা মহাকাশে ঘুরতে থাকে। এটা যেমন সৌর বায়ু এবং বিকিরণের প্রভাব থেকে আমাদের গ্রহকে রক্ষা করে তেমনই বায়ুমণ্ডলকে পৃথিবীপৃষ্ঠ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে দেয়না।
১৯৬৮ সালে, বিজ্ঞানীরা একটা ঘটনা বর্ণনা করেছিলেন যা মহাকাশ যুগের আগে পর্যন্ত দেখা যায়নি। পৃথিবীর মেরু দিয়ে উড়ে যাওয়া উড়ন্ত মহাকাশযান থেকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল থেকে সুপারসনিক কণা স্রোতের মতো বেরিয়ে আসছে তা শনাক্ত করা গেছে। একে তৃতীয় বৈদ্যুতিক শক্তি ক্ষেত্র হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল, যা এখন অ্যাম্বিপোলার ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। এটি মহাকর্ষের বিরুদ্ধে কাজ করে, মহাকাশে কণা ছড়াতে থাকে। একে আগে পরিমাপ করার মতো প্রযুক্তি ছিল না। বর্তমানে এই অদৃশ্য শক্তির সন্ধানে এন্ডুরেন্স রকেট তৈরি করা হয়েছে।
প্রায় ২৫০ কিলোমিটার উচ্চতায় আয়নোস্ফিয়ার নামে বায়ুমণ্ডলের স্তর শুরু হয়। এখানে চরম অতিবেগুনি রশ্মি, ও সৌর বিকিরণ বায়ুমণ্ডলীয় পরমাণু আয়নিত করে। নেগেটিভ চার্জযুক্ত ইলেকট্রন বার করে দিয়ে, পরমাণুগুলো পজিটিভ চার্জযুক্ত আয়নে পরিণত হয়। হালকা ইলেকট্রন মহাকাশে উড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, আর ভারি পজিতিভ আয়ন মাটির দিকে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু প্লাজমা পরিবেশ চার্জ নিরপেক্ষতা বজায় রাখার চেষ্টা করে। যার ফলে ইলেকট্রন এবং পজিটিভ আয়নগুলোর মধ্যে বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের উত্থান হয়, যা তাদের একত্রিত করে রাখার চেষ্টা করে। একে অ্যাম্বিপোলার ক্ষেত্র বলা হয় কারণ এটা উভয় দিকেই কাজ করে, পজিটিভ আয়নগুলোর নিম্নমুখী টান আর ইলেকট্রনগুলোর ঊর্ধ্বমুখী টান থাকে। এর ফলে বায়ুমণ্ডল ফুলে-ফেঁপে ওঠে। বর্ধিত উচ্চতার জন্য কিছু আয়ন মহাকাশে ছিটকে যায় যা মেরু বায়ুতে দেখা যায়। তবে এই শক্তি ক্ষেত্র খুব দুর্বল। এন্ডুরেন্স রকেট মাত্র ০.৫৫ ভোল্ট বৈদ্যুতিক বিভব মেপেছে। কিন্তু এর থেকে মেরু বায়ুর রহস্য ভেদ হয়েছে। এই গবেষণা নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।