পৃথিবী ধ্বংস না করে আমরা বাঁচতে পারি?

পৃথিবী ধ্বংস না করে আমরা বাঁচতে পারি?

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

আমরা পৃথিবীর ৮০০ কোটি মানুষ অন্য প্রণীদের তুলনায় অনেক বেশি পৃথিবীর সম্পদ ব্যবহার করি। আর তা এমনভাবে ব্যবহার করি যা টেকসই নয়। ক্লাউস হুবাসেক, নেদারল্যান্ডসের গ্রোনিংজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, এ বিষয়ে খতিয়ে দেখে তার নান গবেষণা প্রকাশ করেছেন। আমাদের কতটা জল, জমি বা বাঁচার জন্য সম্পদ দরকার? পৃথিবী যতটা দেয়, তার মধ্যে আমরা কি নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখতে পারব? আমাদের ব্যবহারের ধরন পরিবেশকে প্রভাবিত করে। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হল বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব। ১৯৬০ এর দশক থেকে ক্রমবর্ধমান দ্রুত হারে এই গ্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ণ তার সমস্ত ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে হাজির হয়েছে। পৃথিবীর সম্পদ আমরা কতটা পরিমাণে ব্যবহার করতে পারি, তার একটা সীমা রয়েছে। ২০০৯ সালে, বিজ্ঞানীরা নটি ক্ষেত্রে ‘গ্রহের সীমানা’ সংজ্ঞায়িত করেছিলেন। এগুলো অতিক্রম করলে পৃথিবীর স্থিতিশীলতা এবং স্থিতিস্থাপকতার অপরিবর্তনীয় ক্ষতি হতে পারে। এই গ্রহের সীমানাগুলির মধ্যে রয়েছে মহাসাগরের অম্লকরণ, তাজা জলের বিশ্বব্যাপী ব্যবহারের মতো সূচক। ২০২৩ সালে, ছটা সূচকের সীমানা আমরা অতিক্রম করে ফেলেছি।
হুবাসেক আমাদের এই গ্রহের সীমানার পরিপ্রেক্ষিতে মানুষ কীভাবে জীবন কাটায়, আর এই সীমা অতিক্রম যাতে না হয়, তার জন্য কী পরিবর্তন করতে হবে, তা নিয়ে আজীবন অধ্যয়ন করছেন। তিনি ১৬৮ টা দেশের ২০১ টা দলের ৬টা ক্ষেত্রে সম্পদ ব্যবহার নিয়ে এক বিস্তৃত গবেষণা করেছেন। পৃথিবীর ১% মানুষ যারা সর্বাপেক্ষা ধনী, তারা ৪০০ কোটি দরিদ্রতম মানুষের তুলনায় ৫০ গুণ বেশি গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য দায়ী। নেচার জার্নালে প্রকাশিত তার এই গবেষণা ধনী ও দরিদ্রের বিভাজন স্পষ্ট করে তুলেছে। গবেষণা জানাচ্ছে, বিশ্বের শীর্ষ ২০ শতাংশ ভোক্তা তাদের সম্পদ ব্যবহারের অভ্যাস যদি টেকসই ব্যবহারের দিকে নিয়ে যায়, তাহলেই পরিবেশগত প্রভাব ২৫ থেকে ৫৩ শতাংশ কমতে পারে। শুধুমাত্র খাদ্য এবং পরিষেবা খাতে খরচের ধরন পরিবর্তন করলে গুরুত্বপূর্ণ গ্রহের সীমানাকে নিরাপদ সীমার মধ্যে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। তার আগের গবেষণাপত্রে তিনি জানিয়েছিলেন খাবারে প্রাণীর মাংস কম করে ডাল আর বাদাম জাতীয় খাবার অন্তর্ভুক্ত করলেই খাদ্যশিল্পের নির্গমন ১৭% কমে যাবে। মাংস শিল্প কীভাবে এই সীমা অতিক্রম করছে তিনি কিছুদিন আগেই তার অন্য পেপারে তা তুলে ধরেছিলেন। আর এই বিষয়ে যে পদক্ষেপ নিতে হবে তা অঞ্চল ভিত্তিক হতে হবে বলে তিনি জানান। তিনি কোনো প্রযুক্তিগত সমাধানের বিরুদ্ধে। তার মতে নানা প্রযুক্তি আনা হয়েছে, কিন্তু তা ঠিকমতো ব্যবহার করা যায়নি। তার ওপর বিশ্বের সমস্ত সরকার খারাপ কাজের জন্য ভর্তুকি দিয়ে থাকে। যেমন জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের পরিবর্তে কার্বন ট্যাক্স দেয়। তিনি জানান গ্রহের সীমানা নিরাপদে রাখার জন্য এ বিষয়ে রাজনৈতিক ইচ্ছা ও উদ্যোগ জরুরি।