পেট্রিকর

পেট্রিকর

দিগন্ত পাল
Posted on ২৮ জানুয়ারী, ২০২৫

আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে আপনার সবচেয়ে প্রিয় গন্ধ কী, আপনার উত্তর কী হবে?
আমাকে প্রশ্ন করা হলে আমার উত্তর হবে “বৃষ্টির গন্ধ”!
শুধু আমার নয়, বহু মানুষের সবচেয়ে প্রিয় গন্ধ হলো বৃষ্টির গন্ধ!
সারা পৃথিবী জুড়ে বৃষ্টির গন্ধ এতটাই জনপ্রিয় যে সুগন্ধী শিল্পীরা কৃত্রিমভাবে বৃষ্টির গন্ধের সুগন্ধী তৈরি করে থাকেন!
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে; বজ্রপাতসহ বৃষ্টি হলে যে সঞ্জীবনী সোঁদা গন্ধের জন্ম হয়, সুগন্ধী শিল্পীরা কৃত্রিমভাবে সেই গন্ধ প্রস্তুত করেন কীভাবে?
সুগন্ধী শিল্পীরা সেই গন্ধ পরীক্ষাগারে তৈরি করে থাকেন জলে “ওজোন” নামক মৌলিক গ্যাস, “জিওস্মিন” নামক এক যৌগিক পদার্থ, স্টিয়ারাক অ্যাসিড, ও প্যামিটিক অ্যাসিড দ্রবীভূত করে!
বলাইবাহুল্য, মানুষ এই বিশেষ গন্ধসম্পন্ন দ্রবণ প্রস্তুত করতে শিখেছে প্রকৃতির কাছ থেকেই।
আমরা এখন জানব যে প্রকৃতি এই দ্রবণের উপাদানগুলিকে একে অপরের সাথে মেশায় কীভাবে!

মেঘে-মেঘে বা মেঘে-পর্বতে অথবা মেঘের সাথে ভূমির ঘর্ষণের ফলে প্রচুর পরিমাণে স্থির তড়িৎ উৎপন্ন হওয়াকেই আমরা বজ্রপাত হিসেবে জানি।
এই বজ্রপাতের প্রভাবে আমাদেরকে ঘিরে থাকা বায়ুমণ্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে উপস্থিত নাইট্রোজেন গ্যাস ও অক্সিজেন গ্যাসের বেশ কিছু অণু ভেঙে গিয়ে পারমাণবিক নাইট্রোজেন গ্যাস ও পারমাণবিক অক্সিজেন গ্যাস তৈরি হয়।
এই পারমাণবিক নাইট্রোজেন গ্যাস ও পারমাণবিক অক্সিজেন গ্যাস রাসায়নিকভাবে খুব সক্রিয় হয় এবং একে অপরের সাথে বিক্রিয়া করে বাতাসে নাইট্রিক অক্সাইড গ্যাস ও ওজোন গ্যাস উৎপাদন করে।
কিছুটা বজ্রপাতের পরই বৃষ্টি শুরু হলে, বৃষ্টির ফোঁটা বাতাস ভেদ করে যখন নিচে নামতে থাকে, বাতাসেই ইতিমধ্যেই তৈরি হওয়া ঐ ওজোন গ্যাস বৃষ্টির ফোঁটার জলে গুলে যায়।

আবার মাটিতে “অ্যাক্টিনোমিসিট্স” নামে এক বিশেষ ধরনের ব্যাকটেরিয়া বাস করে যাদের কোষে “জিওস্মিন” নামক পদার্থটি সংশ্লেষিত হয়।
বৃষ্টি হলেই এই ব্যাকটেরিয়ার কোষ বাতাসে জিওস্মিন নির্গত করতে থাকে।
ফলে ওজোন গোলানো বৃষ্টির ফোঁটার জলে বাতাসে ছড়িয়ে পড়া এই জিওস্মিন দ্রবীভূত হয়ে যায়।

শুষ্ক আবহাওয়ায় নানান পাথরের গা ঘেঁষে জন্মানো অনেক উদ্ভিদ স্টিয়ারাক অ্যাসিড, প্যামিটিক অ্যাসিড – এই ফ্যাটি অ্যাসিডগুলি তৈরি করে থাকে এবং এই অ্যাসিডগুলি সেই পাথরের গায়ে সঞ্চিত থাকে।
যখন বৃষ্টি হয়, পাথরের গায়ে জমে থাকা এই অ্যাসিডগুলি বাতাসে উন্মুক্ত হতে থাকে এবং ওজোন ও জিওস্মিন গোলা বৃষ্টির ফোঁটার জলে দ্রবীভূত হয়।

এইভাবে পাথর, মাটি, বাতাস, বিদ্যুৎ, ও জল– এই সকলের অবদানে প্রকৃতি পাত্র ভরে ওঠে এক স্বর্গীয় গন্ধযুক্ত দ্রবণে!
এই দ্রবণ তৈরি হওয়ার ধাপগুলি আবিষ্কার করেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার একদল বিজ্ঞানী এবং ১৯৬৪ সালে এই অনন্য গন্ধের নাম দিয়েছিলেন – “পেট্রিকর”!
গ্রীক ভাষায় “পেট্রা” শব্দের অর্থ হলো “পাথর” ও গ্রীক পুরাণ অনুযায়ী “আইকর” হলো “ঈশ্বরের রক্ত” – এই দুই শব্দকে জুড়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ঐ বিজ্ঞানীর দল বৃষ্টির গন্ধের নাম রেখেছিলেন – “পেট্রিকর”!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen + 2 =