পোষ্যেরও ডায়াবেটিস !

পোষ্যেরও ডায়াবেটিস !

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ জানুয়ারী, ২০২৫

হ্যাঁ আপনি একদম ঠিক দেখেছেন। আপনার প্রিয় পোষ্যটিরও ডায়াবেটিস হতে পারে। পোষ্য কিংবা মানুষ ডায়াবেটিসের সমস্যা নিয়ে নাজেহাল সকলেই। বিড়াল এবং কুকুরের ডায়াবেটিস আজকাল বেশ সাধারণ ঘটনা – যদিও মানুষের মতো অতটা সাধারণও নয়। প্রায় ১.৫% কুকুর এবং ০.৫ – ১% বিড়াল এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। প্রায় ২০% ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বিড়াল এবং কুকুরদের রোগ নির্ণয়ের এক বছরের মধ্যেই মেরে ফেলা হয়। এর কারণ তাদের স্বাস্থ্য ক্রমশ খারাপ হয়, আবার অনেক ক্ষেত্রে তাদের মালিকের জীবনধারা এবং আর্থিক কারণেও তাদের এই পরিণতি হয়। তবে আশার কথা, রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। কুকুরদের ক্ষেত্রে না হলেও বিড়ালদের ক্ষেত্রে কার্যকর প্রাথমিক চিকিত্সা তাদের কিছুটা সারিয়ে তুলতে পারে।
রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে বলা হয় প্রাণীটি ডায়াবেটিস মেলিটাসে আক্রান্ত হয়েছে। মধ্যবয়সী অথবা বয়স্ক কুকুর বা ভারী চেহারার স্ত্রী কুকুরদের ঝুঁকি বেশি থাকে। টাইপ ১ ডায়াবেটিস একধরনের অটোইমিউন অবস্থা যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অগ্ন্যাশয়ের কোশকে আক্রমণ করে ধ্বংস করে যার ফলে সেই অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিসৃত হরমোন ইনসুলিন উৎপাদন হ্রাস পায়। মধ্যবয়সী কুকুরের মধ্যে টাইপ ১ সাধারণ হলেও বিড়ালের ক্ষেত্রে এটি প্রায় দেখা যায়না। অন্যদিকে টাইপ ২ ডায়াবেটিস কোনো অটোইমিউন অবস্থা নয়। শরীরের কোশগুলো যখন সময়ের সাথে সাথে ইনসুলিন প্রতিরোধী হয়ে ওঠে এবং শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি হয় না সেই অবস্থাকে টাইপ ২ ডায়াবেটিস বলে। টাইপ ২ ডায়াবেটিস বিড়ালদের মধ্যে দেখা যায় কিন্তু কুকুরদের মধ্যে ততটা সাধারণ নয়। বেশিরভাগক্ষেত্রে পোষ্যদের ডায়াবেটিস হওয়ার মূল কারণ হল স্থূলতা এবং বয়স বৃদ্ধি। তাছাড়াও কিছু জিনগত কারণ, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, বাড়ির ভিতরে বন্ধ করে রাখা এবং গ্লুকোকোর্টিকয়েড স্টেরয়েড ব্যবহারের ফলেও এদের মধ্যে ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে। ডায়াবেটিসের লক্ষণ সাধারণত কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস ধরে ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। রোগ নির্ণয় বিলম্বিত হলে, পোষা প্রাণীর স্বাস্থ্য ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে দ্রুত হ্রাস পেতে পারে, অবিলম্বে চিকিত্সা না করা হলে মৃত্যুও হতে পারে। তাই পোষ্যর স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে হবে, তাদের যদি বার বার জল তেষ্টা পায়, ঘন ঘন প্রস্রাব হতে থাকে, চোখ ঘোলাটে হয়ে আসে তাহলে সাবধান হতেই হবে। ডায়াবেটিস হলে পোষা কুকুরের ওজন আচমকা কমে যেতে পারে। প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়বে। সারা ক্ষণ ঝিমোবে। চনমনে ভাবটা আর থাকবে না। মানুষের মতো পোষ্যদের চিকিৎসার জন্যও ইনসুলিনই ভরসা। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পোষ্যের খাওয়াদাওয়ায় নজর দিতে হবে। পোষ্যের রোজের খাবারে আনতে হবে কিছুটা বদল। পশু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ডায়াবেটিস হলে পোষ্যের খিদেও কমে যায়। হয়তো খেতেই চাইবে না। কিছু শারীরিক জটিলতাও দেখা দিতে পারে। তাই সময়ান্তরে চিকিৎসকে দেখিয়ে নেওয়া জরুরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × four =