
জাপানে বহু দিন থেকে ‘শিনরিন-ইয়োকু’ বা বনস্নানকে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। প্রকৃত বনে কিছু সময় কাটালে রক্তচাপ কমে এবং মানসিক চাপও হ্রাস পায়। এটি এখন বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত। প্রশ্ন উঠেছে, প্রযুক্তির মাধ্যমে (যেমন পর্দা, শব্দ বা কৃত্রিম গন্ধ ব্যবহার করে) কি এই প্রভাব তৈরি করা সম্ভব? ইউরোপের বৃহত্তম ‘ডগলাস ফার’ বন- এ তৈরি হয়েছে উন্নতমানের ৩৬০° ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (অপ্রকৃত বাস্তবতা) ভিডিও। সোনেনবার্গ সংরক্ষিত প্রকৃতি অঞ্চলে আসল শব্দ, গাছের তেল থেকে নেওয়া প্রাকৃতিক সুগন্ধি এবং ক্যামেরার দৃশ্য একত্র করে একটি প্রায়-বাস্তব অভিজ্ঞতা রচনা করা হয়। গবেষণায় ১৩০-এর অধিক অংশগ্রহণকারীকে চার রকম অপ্রকৃত বাস্তবতার অভিজ্ঞতা দেওয়া হয়—সম্পূর্ণ ইন্দ্রিয়নির্ভর (দৃশ্য, শব্দ, ঘ্রাণ), শুধু দৃশ্য, শুধু শব্দ এবং শুধু ঘ্রাণ। মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী পরীক্ষার পর অংশগ্রহণকারীরা অপ্রকৃত বাস্তবতার চশমা পরে এই অভিজ্ঞতাগুলো গ্রহণ করেন। ফলাফল থেকে দেখা যায়, শুধুমাত্র শব্দ বা ঘ্রাণের ভিত্তিতে অভিজ্ঞতা নেওয়া ব্যক্তিরা ডিজিটাল পরিবেশে থাকার মতো অনুভব করেন, প্রকৃতির সংযোগ কম অনুভব করেন। যাঁরা তিনটি ইন্দ্রিয় একসাথে ব্যবহার করেন, তাদের মানসিক প্রশান্তি ও প্রকৃতি-সংযোগের অনুভূতি অনেক বেশি হয়। তাদের কর্মশীল স্মৃতিতেও সামান্য উন্নতি দেখা যায়।
গবেষক লিওনি আসকোনে বলেন, “ডিজিটাল প্রাকৃতিক অভিজ্ঞতা আবেগের উপর প্রভাব ফেলে বটে, কিন্তু তা প্রকৃতির বিকল্প হতে পারে না।” গবেষণা প্রধান সিমোনে কুন বলেন, “যেসব স্থানে প্রকৃতির স্পর্শ কম, যেমন হাসপাতালের ওয়েটিং রুম বা শহরের ক্লিনিক, সেখানে এই বহু-ইন্দ্রিয় নির্ভর অপ্রকৃত বাস্তবতার অ্যাপ মানসিক স্বাস্থ্যের সহায়ক হতে পারে।” গবেষণার মূল বার্তাটি হলো, প্রকৃতি শুধু দেখার নয়, অনুভব করার বিষয়। শুধু ভিডিও দেখলেই হয় না; চোখ-কান-নাক তিনটি ইন্দ্রিয় একসাথে সক্রিয় হলে তবেই প্রকৃত সংযোগ তৈরি হয়। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রকৃতির ভিডিও দেখেও অনেক রোগীর শারীরিক ব্যথা কমানো সম্ভব হয়েছে। তবে এই অপ্রকৃত বাস্তবতার অভিজ্ঞতা সকলের জন্য সমান কার্যকর হবে কিনা তা বলা যাচ্ছে না, তার জন্য বড় ও দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা প্রয়োজন।