প্রকৃতির রোষানলে তাপিত কুমেরু

প্রকৃতির রোষানলে তাপিত কুমেরু

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৫ মে, ২০২৫

হাজার হাজার মাইল দূরের সামুদ্রিক পরিবর্তন দ্বারা অ্যান্টার্কটিক উষ্ণায়ন প্রভাবিত হচ্ছে । অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপীয় অঞ্চলটি ব্যাপকভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে আকস্মিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে,যা বিশ্বের নিরিখে গড়ে পাঁচগুণ বেশি উষ্ণ।২০২০ সালে সিমুর দ্বীপের তাপমাত্রা বেড়ে হয়েছিল ১৮.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস, যা অভাবনীয়। এই বর্ধিষ্ণু তাপমাত্রা কিভাবে বরফ গলন ও সামুদ্রিক স্তরে প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা যথেষ্ট চিন্তিত।তাসমান সাগর গ্রহের দক্ষিণপ্রান্তের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে কিভাবে অবদান রাখতে পারে তা নিয়ে অনুসন্ধান চলছে ।ইতিমধ্যে,বিশেষজ্ঞরা আবিষ্কার করেছেন যে তাসমান সাগরের শীতকালীন সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বায়ুমণ্ডলীয় কার্যপদ্ধতিকে প্রভাবিত করে অ্যান্টার্কটিকাকে চরম উত্তাপের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই ফলাফলগুলি মধ্য অক্ষাংশীয় মহাসাগরের পরিবর্তনের জন্য দায়ী শক্তিকে তুলে ধরে। অ্যান্টার্কটিকার তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে তাসমান সাগরের অবদান নিয়ে সান ইয়াত-সেন ইউনিভার্সিটির ডক্টর ফেই ঝেং বলেছিলেন তাসমান সাগরের উষ্ণ ও শীতল তাপমাত্রা সমগ্র প্রশান্ত মহাসাগর জুড়ে জলবায়ুগত এক তরঙ্গায়িত প্রভাব ফেলে যা অ্যান্টার্কটিকাকে উষ্ণ করছে।
এছাড়াও স্থানান্তরিত বাতাস অ্যান্টার্কটিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করে। যেমন প্রশান্ত মহাসাগর ও দক্ষিণ আমেরিকার মধ্যেকার জলবায়ুগত এই বিশেষ সংযুক্ত প্যাটার্ন তাসমান সাগরের জল শীতল থেকে উষ্ণ হওয়ার সময় চাপ স্থানান্তরের সাথে বায়ুপ্রবাহের একটি শৃঙ্খল তৈরি করে। যা অ্যান্টার্কটিকার কিছু অংশকে অস্বাভাবিকভাবে উষ্ণ করে তোলে । ডক্টর ঝেং ও অন্য গবেষকরা বলেন যে এই ধরণের প্যাটার্নের ওপর কম গ্রিড পয়েন্টগুলির তুলনায় উচ্চ রেজোলিউশনের জলবায়ু মডেল বেশি ভালো কাজ করে।
তবে তাসমান ও অ্যান্টার্কটিকার সংযোগকে ঘিরে বিভ্রান্তিও আছে । কিছু মডেল অ্যান্টার্কটিক উপদ্বীপের তাপমাত্রা কতটা পরিবর্তিত হয় তা নিয়ে অতিমূল্যায়ন করে আবার তাসমান সাগরতল একই ঋতুতে কতটা ওঠানামা করে তা নিয়ে অবমূল্যায়ন করে। গবেষকরা এই মডেলগুলি পরিমার্জিত করার দিকে লক্ষ্য রাখেন, যাতে ভবিষ্যতে তাপমাত্রার অনুমান আরও নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য হয়। অ্যান্টার্কটিক তাপ বিশ্বব্যাপী সমুদ্রস্তরের পরিবর্তনকে প্রভাবিত করছে । এর প্রভাবগুলিকে সঠিক ভাবে চিহ্নিত করতে পারলে পরিবেশগত পরিবর্তনের জন্য সংরক্ষণ ও পরিকল্পনা সম্পর্কে আরও ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে ।
ভাসমান-অ্যান্টার্কটিকা সংযোগ মডেলটি জলবায়ুর সাম্প্রতিক অসঙ্গতি নিয়েও ব্যাখ্যা করতে সহায়তা করতে পারে।তাসমান সাগরের উষ্ণ জল বায়ুপ্রবাহের ধরনকে পরিবর্তন করতে পারে যা দক্ষিণ গোলার্ধে তাপ আটকে রেখে অ্যান্টার্কটিকার উষ্ণতা বৃদ্ধি করে।
গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন যে, প্রাকৃতিক পরিবর্তনশীলতা দীর্ঘমেয়াদী প্রবনতাকে আড়াল করতে পারে। সেক্ষেত্রে, স্বল্পমেয়াদী পরিবর্তনগুলোকে বাছাই করে নেওয়াই হবে অ্যান্টার্কটিকার জন্য কর্মপরিকল্পনাকে উন্নত করার মূল চাবিকাঠি ।
তাসমান সাগরের সাথে থাকা বায়ুমণ্ডলীয় সংযোগ শুধু অ্যান্টার্কটিকাকে প্রভাবিত করে তাই নয়, গবেষকদের মতে দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অংশ এবং পশ্চিম মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রও সামুদ্রিক পরিবর্তনের কারণে আবহওয়া পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা পেতে পারে । ভবিষ্যতে হয়ত বৃহত্তর সংযোগ প্রকাশিত হতে পারে।
সমুদ্র ও বায়ুমণ্ডলের সংযুক্ত খামখেয়ালের হাত থেকে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করার জন্য গবেষকরা ছোটো আকারে এবং আরও ভালো তথ্য নিয়ে জলবায়ু মডেলগুলিকে পরিমার্জনের পরিকল্পনা করছেন। তাঁরা আশা করেন মডেলের সর্বাধিক নির্ভুলতা উপকূল তীরবর্তী মানবসম্প্রদায়কে উপকূলীয় হুমকির বিরুদ্ধে পরিকল্পনা প্রয়োগে সহায়তা করবে। বলিষ্ঠ পূর্বা্ভাস দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি ও পরিবর্তনশীল আবহওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার কৌশলমুখী পথ দেখাতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fifteen − 3 =