প্রজাপতির দ্বিতীয় মাথার কেরামতি

প্রজাপতির দ্বিতীয় মাথার কেরামতি

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ২৪ জুলাই, ২০২৫

দেখা গেছে প্রজাপতিরা শিকারিদের বিভ্রান্ত করার এক বিচিত্র কৌশল কাজে লাগায়। তাদের পাখায় জটিল নকশা ও গঠন দেখে মনে হয় ওটা বুঝি আরেকটা মাথা – দ্বিতীয় মাথা! এই নকল মাথাকে শিকারিরা আসল মাথা ভেবে আক্রমণ করে, ফলে প্রজাপতিরা প্রাণে বাঁচে।

সম্প্রতি প্রোসেডিংস অফ দ্যা রয়্যাল সোসাইটি বি জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণাপত্রে, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (IISER)-এর গবেষকরা এই নকল মাথার উৎপত্তি নিয়ে আরও গভীরে অনুসন্ধান করেছেন। ধাপে ধাপে কীভাবে প্রজাপতিরা এমন একটি বিশ্বাসযোগ্য প্রতিরূপ তৈরি করার ক্ষমতা অর্জন করেছে, তার বিবর্তনীয় ইতিহাস পুনর্গঠন করেছেন তাঁরা।
বিজ্ঞানীরা আগে থেকেই ধারণা করেছিলেন যে এই মেকি মাথা পাঁচটি মূল বৈশিষ্ট্যের একত্র বিবর্তনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে – নকল শুঁড়, চোখে পড়ার মতো রঙ, ডানায় সম্মিলিত রেখা-ভিত্তিক নকশা, বড় দাগ এবং মাথার মতো আকৃতি। কিন্তু এতদিন কেউই এই বৈশিষ্ট্যগুলোর বিবর্তনীয় শিকড় খুঁজে দেখেননি। আইজারের
বিবর্তনমূলক পরিবেশবিদরা প্রায় ১০০০ প্রজাতির প্রজাপতির ছবি বিশ্লেষণ করে প্রত্যেকটিতে কতগুলো নকল মাথা সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য আছে, তা চিহ্নিত করেন। এরপর তারা একটি বংশগত বিবর্তনের চিত্র তৈরি করেন, যা থেকে জানা যায়, কোন প্রজাতিগুলো পরস্পরের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং কীভাবে প্রতিটি বৈশিষ্ট্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিবর্তিত হয়েছে।
তাঁরা দেখেন এই বিবর্তন একটি নির্দিষ্ট ক্রম অনুসরণ করে হয়েছে। প্রথমে বিবর্তিত হয় উজ্জ্বল ডানার রঙ, এরপর আসে সম্মিলিত রেখাযুক্ত ডানা-নকশা। এরপর প্রজাপতিরা নকল শুঁড় ও উজ্জ্বল দাগ অর্জন করে এই ধারায়, এবং শেষে এমন নকশা বিবর্তিত হয় যা নকল মাথার গঠনকে আরও বাস্তবিক করে তোলে।

আগের গবেষণাগুলোর মতো, এই গবেষণা থেকেও দেখা যায় যে প্রজাপতির প্রকৃত মাথায় আঘাত লাগলে তাদের ওড়ার ও প্রজননের ক্ষমতা অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কিন্তু পেছনের দিকে থাকা নকল মাথায় আঘাত লাগলে তেমন সমস্যা হয় না। ফলে এই প্রতিরূপ একটি কার্যকরী প্রতিরক্ষা কৌশল।
তবে গবেষকরা এটিও বলেন, এখনো পরিষ্কারভাবে জানা যায়নি যে এই প্রতিরূপগুলি প্রকৃতপক্ষে ঠিক কতটা উপকার দেয় বা ঠিক কীভাবে শিকারিরা এতে বিভ্রান্ত হয়। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর ভবিষ্যতের গবেষণাসাপেক্ষ।

সূত্রঃ Proceedings of the Royal Society B: Biological Sciences (2025).

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − nine =