প্রজাপতিহীন দেশ !

প্রজাপতিহীন দেশ !

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ১৩ মার্চ, ২০২৫

প্রজাপতিরা হারিয়ে যাচ্ছে। প্রায় সবধরনের প্রজাপতি হারিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের বুক থেকে। এই বিলুপ্তি এক অশনিসংকেত। অতি দ্রুত গতিতে ঘটছে এ ঘটনা। বিগত দুই দশকে (২০০০-২০২০), ৫৫৪টি প্রজাতির মোট ২২% প্রজাপতির সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। সায়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণা, ‘সম্ভাব্য প্রজাপতিহীন দেশ’ হিসাবে সমগ্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হতাশাজনক এক চিত্র তুলে ধরেছে। যাবতীয় পতঙ্গ-গোষ্ঠীর মধ্যে
সবচেয়ে বেশি সমীক্ষা করা হয়েছে প্রজাপতি নিয়ে। তা সে স্বেচ্ছামূলক হোক কিংবা বিশেষ বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ কর্মসূচির জন্যই হোক। তবে আগের গবেষণাগুলি, বেশিরভাগই ছিল মোনার্ক প্রজাপতিকে কেন্দ্র করে। অথবা বলা যায়, গবেষণাগুলি নির্দিষ্ট স্থানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই নতুন গবেষণাটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডে প্রাপ্ত আঞ্চলিক সমস্ত প্রজাপতির তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবহার করেছে। এলিস জিপকিন এবং নিক হাদাদ- এর নেতৃত্বে, বিজ্ঞানীদের একটি কার্যকরী দল, ৩৫টি মনিটর প্রোগ্রামে দশকের পর দশক ধরে প্রজাপতির তথ্য সংগ্রহ করেন। ১২.৬ মিলিয়নেরও বেশি প্রজাপতির তথ্য তার অন্তর্ভুক্ত। তথ্য একীকরণ পদ্ধতি ব্যবহার করে, দলটি পর্যাপ্ত তথ্য সহ ৩৪২টি প্রজাতির প্রজাপতির সংখ্যা কীভাবে আঞ্চলিকভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে পরিবর্তিত হয়েছে তা পরীক্ষা করেছে। শত শত প্রজাতির জন্য তুলনীয় ফলাফল তৈরি করেছে। দেখা যাচ্ছে, প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল ছাড়া দেশজুড়ে প্রজাপতির মোট সংখ্যা প্রতি বছরে গড়ে ১.৩% হারে কমছে। কিন্তু কুড়ি বছরের এই গবেষণা চলাকালীন, প্রশান্তের উত্তর-পশ্চিমে প্রজাপতির সামগ্রিক প্রাচুর্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১০%। এই দৃশ্য অবাক করার মতন। কেন? কারণ ভালভাবে পরীক্ষা করে দেখা গেছে যে মূলত ক্যালিফোর্নিয়া টর্টোইসশেল প্রজাপতিই বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি এমন এক প্রজাতি যার সংখ্যা বৃদ্ধি হলেও এই মোট সংখ্যা ধরে রাখা যাবে বলে আশা করা যায় না। এই গবেষণা যুক্তরাষ্ট্রে প্রজাপতির উপর করা একটি চূড়ান্ত গবেষণা বলা যেতে পারে। গবেষণাপত্রর প্রধান লেখক কলিন এডওয়ার্ডস জানান, “প্রজাপতি এবং অন্যান্য পতঙ্গকে রক্ষা করতে, স্থানীয় এবং জাতীয় স্তরে সংরক্ষণ উদ্যোগের প্রয়োজন। বর্তমানে প্রজাপতির সংখ্যা হ্রাসের যে ছবি পাওয়া যায় তা আগে এত স্পষ্ট এবং প্রভাবশালী ছিল না।” গবেষণার ফলাফল বলছে, ১০৭টি প্রজাতির প্রায় অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। জিপকিন এবং হাডাড বলেন, প্রজাপতিরা তো কেবল মুক্তি ও সৌন্দর্যের প্রতীক নয়। তারা পুষ্টির চক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাখিদের পাশাপাশি আরও অন্যান্য জীবদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উৎস। গত পাঁচ দশকে, উত্তর আমেরিকা প্রায় ৩ বিলিয়ন পাখি হারিয়েছে। এটি প্রজাপতির সংখ্যা হ্রাসের সাথে প্রায় সমান হারে ঘটছে। শুধু তাই নয়, পরাগায়নকারী হিসাবেও প্রজাপতিদের প্রভূত গুরুত্ব রয়েছে। টেক্সাসের ১২০ মিলিয়ন ডলারের তুলা উৎপাদনের সহযোগী এই প্রজাপতি এবং কিছু প্রজাতির মাছি। জিপকিন বলেন “আমরা যে হারে বিভিন্ন প্রজাতি হারাচ্ছি তা পৃথিবীর বৃহত্তম গণ বিলুপ্তির ঘটনাগুলির সাথে তুলনীয়”। নীতি নির্ধারণ এবং আইন তৈরি করতে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। স্থানীয় থেকে বৈশ্বিক স্তরে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং সুরক্ষা করতে তাদের সচেতন উদ্যোগের প্রয়োজন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ থাকুক – এটাই কাম্য।

One thought on “প্রজাপতিহীন দেশ !

  1. Aparna Mandal

    প্রজাপতি কে নিয়ে এত গবেষণা মূলক লেখা এর আগে কোথাও পড়িনি। ভালো লাগলো লেখা পড়ে। প্রজাপতি এর মতো আরো অনেক জীব আছে যারা হারিয়ে যাচ্ছে। তাদেরও খোঁজ এর খবর পাওয়া যাবে আশা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 18 =