প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন মহিলা অ্যাডিনোমায়োসিসে আক্রান্ত

প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন মহিলা অ্যাডিনোমায়োসিসে আক্রান্ত

বিজ্ঞানভাষ সংবাদদাতা
Posted on ৪ মার্চ, ২০২৪

এন্ডোমেট্রিয়োসিসের পাশাপাশি অনেক মেয়ে এখন অ্যাডিনোমায়োসিসে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে এখনও অনেকে এই রোগের কথা শোনেনি, যদিও প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন মহিলা এই রোগে আক্রান্ত। অনেক মেয়েদের ঋতুস্রাবের সময় খুব বেশি রক্ত ক্ষরণ হয়। পেটে ব্যথাও হয়। বিভিন্ন রোগীর ক্ষেত্রে উপসর্গের তীব্রতা পরিবর্তিত হয় – অ্যাডিনোমায়োসিস আক্রান্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রায় এক-তৃতীয়াংশের অল্প বা কোনো উপসর্গই নেই। এই রোগ প্রজনন ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করতে পারে। অ্যাডিনোমায়োসিসে আক্রান্ত মহিলাদের প্রজননের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে যেমন গর্ভপাত, সময়ের আগেই শিশুর জন্ম, প্রি-এক্লাম্পসিয়া এবং প্রসবের পরে রক্তপাত।
জরায়ুতে দুটি স্তর রয়েছে। ভিতরের স্তরটি হল এন্ডোমেট্রিয়াম যেখানে ভ্রূণ স্থাপন হয়। গর্ভ সঞ্চার না হলে এই স্তরটি ঋতুস্রাবের সময় রক্ত ক্ষয় হয়ে বাইরে বেরিয়ে যায়। মায়োমেট্রিয়াম হল জরায়ুর পেশিবহুল স্তর। এটি গর্ভাবস্থায় প্রসারিত হয় এবং সংকোচনের জন্য দায়ী থাকে। অ্যাডিনোমায়োসিসে আক্রান্ত মেয়েদের মধ্যে, জরায়ুর চারপাশে যে পেশির স্তর রয়েছে তাতে এন্ডোমেট্রিয়াল গ্রন্থি বা স্ট্রোমা তৈরি হয়। এতে জরায়ুর আকার বড়ো হয়ে যায়। জরায়ুর এক অংশে এটি হতে পারে আবার গোটা জরায়ু জুড়েও হতে পারে। যদিও অ্যাডিনোমায়োসিসে আক্রান্ত বিপুল সংখ্যক মহিলাদের এন্ডোমেট্রিয়োসিস রয়েছে, তবে অ্যাডিনোমায়োসিস ও এন্ডোমেট্রিয়োসিস দুটি স্বতন্ত্র রোগ। এন্ডোমেট্রিয়োসিসে, এন্ডোমেট্রিয়ামের মতো কোশগুলোও ভুল জায়গায় পাওয়া যায়, তবে এই ক্ষেত্রে জরায়ুর বাইরে, প্রধানত পেলভিক গহ্বরে।
অ্যাডিনোমায়োসিস রোগটি নির্ণয় করা বেশ কঠিন। জরায়ুর স্তর মায়োমেট্রিয়ামে এন্ডোমেট্রিয়ামের মতো কোশের উপস্থিতি শুধুমাত্র হিস্টেরেক্টমি বা জরায়ু অপসারণের অস্ত্রোপচার করার পরে মায়োমেট্রিয়ামকে একটি মাইক্রোস্কোপের নীচে পরীক্ষা করে তবেই যাচাই করা যেতে পারে। সাম্প্রতিককালে এমআরআই এবং পেলভিক আল্ট্রাসাউন্ডের মতো ইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় করা যাচ্ছে। যদিও এখন অ্যাডিনোমায়োসিস শনাক্ত করতে হিস্টেরেক্টমির প্রয়োজন হয় না, এবং ডাক্তাররা এখন রোগ নির্ণয়ের জন্য অন্য পদ্ধতি তৈরি করার চেষ্টা করছেন। ফলস্বরূপ, ঠিক কতজন মহিলার অ্যাডিনোমায়োসিস আছে তা অনিশ্চিত। এই রোগের চিকিত্সার জন্য হরমোনজনিত ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যেমন গর্ভনিরোধক পিল, প্রোজেস্টেরনযুক্ত বড়ি, প্রোজেস্টেরন-রিলিজিং কয়েল (উদাহরণস্বরূপ, মিরেনা) বা GnRHA নামের একটি ওষুধ যা সেক্স-হরমোনের স্বাভাবিক উত্পাদন বন্ধ করে দেয়। অন্যান্য ক্ষেত্রে ট্রানেক্সামিক অ্যাসিড ব্যবহার করা হয়। এই চিকিৎসার লক্ষ্য হল ঋতুস্রাবের সময় রক্তক্ষরণ কম করা। ব্যথা কমানোর জন্য অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ওষুধ ব্যবহার করা হয়। দেখা গেছে কিছু মহিলাদের জন্য যে চিকিৎসা পদ্ধতি কাজ করে অন্যদের ক্ষেত্রে তা কাজ নাও করতে পারে। ফলত মনে করা হয় যে একাধিক ধরনের অ্যাডিনোমায়োসিস রয়েছে। ওষুধে কাজ না হলে পরবর্তী ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের কথা ভাবা যেতে পারে।